সুনামগঞ্জ , শনিবার, ০৩ মে ২০২৫ , ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
সুনির্দিষ্টভাবে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইলেন তারেক রহমান নারী শিক্ষার উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত সড়কে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই সংস্কার! সীমান্তে সক্রিয় গরু চোরাচালান চক্র ১৬৮ পিস ইয়াবাসহ রিকসাচালক গ্রেপ্তার সুবিপ্রবি’র স্থান পরিবর্তনের সুযোগ নেই : সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের মহান মে দিবস উদযাপিত তাপপ্রবাহ ও কালবৈশাখী হতে পারে কয়েক দফায় অর্ধকোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ সোমবার সকালে দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া জামালগঞ্জে ধান কাটতে গিয়ে হাওরে বজ্রপাতে নিহত ১ আজ মহান মে দিবস সুনামগঞ্জে বজ্রপাত আতঙ্ক: দশ বছরে মৃত্যু দেড় শতাধিক নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান শান্তির হাত বাড়াতে হবে, যুদ্ধের প্রস্তুতিও থাকতে হবে : প্রধান উপদেষ্টা সিলেট প্রদেশ বাস্তবায়ন পরিষদের মানববন্ধন শেখ রেহানা, পুতুল, জয় ও ববির বাড়ি-সম্পদ জব্দের আদেশ চিন্ময় ব্রহ্মচারীর জামিন স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার, ফের শুনানি ৪ মে উৎপাদন অনুযায়ী ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়নি, হতাশ হাওরাঞ্চলের কৃষক সুরমা’র গ্রাসে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি-সড়ক

আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুনামগঞ্জ কতটা প্রস্তুত? : হিমাদ্রি শেখর ভদ্র

  • আপলোড সময় : ০১-০৮-২০২৪ ১২:৫৩:২২ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০১-০৮-২০২৪ ১২:৫৩:২২ পূর্বাহ্ন
আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুনামগঞ্জ কতটা প্রস্তুত? : হিমাদ্রি শেখর ভদ্র হিমাদ্রি শেখর ভদ্র
দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় শিক্ষার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছে সুনামগঞ্জ। নেই পর্যাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দুর্গম হাওর এলাকায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মিলে না গুণগত মানের শিক্ষা। বর্ষায় নাও, আর হেমন্তে পাও। মৎস্য পাথর ধান সুনামগঞ্জের প্রাণ।
 
শিশুদের প্রাথমিক ও প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক দুর্বল। ভৌগোলিক অবস্থার কারণে গোটা হাওর এলাকায় বছরের ৬/৭ মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকে। একমাত্র বোরো ফসল ছাড়া বিকল্প কোন কিছু নেই। প্রতিবছর বন্যা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনেক দিন বন্ধ থাকে।
 
ছোট বড় ১৩৭টি হাওর এবং ২৬টি নদী বেষ্টিত জলেভাসা অনগ্রসর জনপদের ক’জন বাবা-মায়ের আর্থিক সামর্থ্য আছে যে নিজের সন্তানকে শহরে বা বড় শহরে বা মহানগরে খ্যাতনামা স্কুল-কলেজে পড়ালেখা শেখানোর। নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যাওয়া পরিবারের লোকজন ঠিক মতো তিন বেলা পেটপুরে খেতে পারে না।
 
বছরের ৩/৪ মাস গ্রামে কাজ পেলেও বাকি সময় কাজের খোঁজে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যান। একটা সময় ছিলো সুনামগঞ্জের দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষ এসে ধান কাটতে আসতেন। এখন সুনামগঞ্জের মানুষ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কাজের খোঁজে যান। সময়ের পালা বদলে এখন সব কিছু ৩৬০ ডিগ্রি বদলে গেছে। কৃষি কাজ মাছ ধরা আর কিছু এলাকায় বালিপাথর উত্তোলন ছাড়া বিকল্প কর্মসংস্থানের কোন সুযোগ নেই।  
বান বন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ দুর্গম যাতায়াত ব্যবস্থা। অনুন্নত সুযোগ-সুবিধার জন্য এখানে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা আসতে চান না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন অনেক এলাকায় কতগুলো শূন্যপদ রয়েছে। 
 
দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক। অনেক মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ হয়না। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের তথ্য মতে এজেলায় স্বল্প ওজন ও খর্বাকৃতির শিশু বেশি। শিশুদের অনেকেই সুষম খাদ্য পায় না। গর্ভে থাকা অবস্থায় শিশুরা অপুষ্টিতে ভোগে। এছাড়া অনেক শিশু স্কুল চলাকালীন দুপুরের খাবার খেতে পারে না। এতে তাদের শারীরিক মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। 
এ জেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রয়েছে শিক্ষক সংকট। হাওরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা গণিত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং ইংরেজিতে যথেষ্ট দুর্বল। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় সুনামগঞ্জ দেশের ৬৪ নম্বর স্থানে অবস্থান করছে।
 
একবার ফসলহানি হলে তিন বছর লাগে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠতে। যেমনটি ২০১৭ সালে দেখেছি- কিভাবে গ্রামের পর গ্রাম ছেড়ে কাজের খোঁজে হাজার হাজার মানুষ উন্নত শহরে যেতে; অনেক শিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত তরুণ-যুবক ইউরোপ যাওয়ার আশায় ‘গেইমের’ নৌকা ওঠে সাগরের নোনা জলে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যেতে।
 
এ অবস্থায় সুনামগঞ্জের তরুণ প্রজন্ম সারা বাংলাদেশের মেধাবী তরুণদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে কিভাবে সরকারি চাকরি নামের সোনার হরিণের দেখা পাবেন তা আমার বোধগম্য নয়। হয়তো পাবেন আবার হয়তো নাও পেতে পারেন। 
 
অনগ্রসর জেলা কোটায় ১০ ভাগ ছিল সুনামগঞ্জের, এখন তা নেই। আগে যেখানে একশো দেড়শো প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতেন, এখন সেই সংখ্যা কোথায় গিয়ে ঠেকবে জানা নেই। দেশের কিছু কিছু জেলায় শিক্ষার হার ও গুণগত মানের ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমমানের রয়েছে। অতি মেধাবীদের সঙ্গে চাকরি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে হাওরাঞ্চলের দুর্বল শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষার্থীদের।
 
জেলায় অনুষ্ঠিত অনেক চাকরি পরীক্ষায় দেখেছি যদি শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম বা এসএসসি  বা এইচএসসি বা বিএ সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সে সব পরীক্ষায় নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে বেশি যোগ্যতার প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করেন এবং উত্তীর্ণ হন। সারাদেশের অতিমেধাবীরা সুনামগঞ্জে চাকরির পরীক্ষা দিতে আসলে কি অবস্থা হবে তা সহজেই অনুমেয়। স্বাভাবিকভাবে বুঝার কথা এই পরীক্ষায় কারা পাস করবে আর কারা ফেল করবে।
 
বিশ্বের উন্নত দেশ থেকে স্বল্পোন্নত দেশে কোটা পদ্ধতি চালু আছে। অনগ্রসর এলাকা জাতি গোষ্ঠী দুর্গম অঞ্চলের মানুষকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে দেশের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসার জন্য। পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, জাপান, ভারতসহ এমন অনেক দেশেই রয়েছে কোটা পদ্ধতি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে তা পরিবর্তন-পরিমার্জন করা হয়। 
কোটা রাখা বা না রাখার পক্ষে-বিপক্ষে কোনটাতে আমার মতামত প্রদান থেকে বিরত থেকে শুধু সুনামগঞ্জের শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষুদ্র পরিসরে কিছু কথা তুলে ধরেছি।
 
আমার নিজ পরিবারের কেউ সোনার হরিণের সঙ্গে দেখা করা তো দূরের কথা স্বপ্ন দেখেনা। যদি কপাল বা ভাগ্য গুণে কেউ সেইরকম মেধাবী হয় তাহলে আন্তর্জাতিক পরিসরে কাজ করে দেশের সুনাম কুড়িয়ে আনবে বলে বিশ্বাস করি। আমার ছোট্ট ছেলে নাসায় চাকরি করার কথা বলে। মেয়ে ইউটিউবে চাকরির স্বপ্ন দেখে। জানিনা তারা কতটা পারবে কি পারবে না। তবে আমি তাদের স্বপ্নসারথী হয়ে থাকতে চাই। 
 
যদি সুনামগঞ্জের মতো দেশে অনেক গঞ্জ আছে তাই বলেই কি সুনামগঞ্জ আর অন্যগঞ্জ এক হয়ে গেল। সুনামগঞ্জের একজন সাবেক জনপ্রতিনিধি কোন এক সভায় বলেছিলেন- সুনামগঞ্জে স্বাস্থ্য শিক্ষা কারিগরি কৃষিসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়েছে। শিশু কিশোর ও তরুণদের লেখাপড়ার অবস্থানগত দিক বিবেচনা করলে দেখা যায়, গ্রামের স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান পড়াশোনা করে উপজেলা শহরে আর উপজেলা শহরের আর্থিক সামর্থ্যবান বাবা মায়ের সন্তান পড়াশোনা করে জেলা শহরে, জেলা শহররের স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান পড়াশোনা করে বিভাগীয় শহরে আর বিভাগীয় শহরের স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান রাজধানী শহরে আর রাজধানী শহরের অতিসামর্থ্যবান পরিবারের সন্তান ইউরোপ-আমেরিকা-মালেশিয়াসহ বিশ্বের উন্নত দেশে। এতো গেল অবস্থান ও সামর্থ্যগত দিক।
 
শিক্ষার মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য শাখা। সবচেয়ে বেশি ব্যয়বহুল হলো বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে লেখাপড়া, জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থ, গণিত, উচ্চতর গণিত, ইংরেজি ইত্যাদি। বাণিজ্য বিভাগে ব্যবসা শিক্ষা, ব্যবস্থাপনা, হিসাব শিক্ষা ইত্যাদি। বিষয়ভিত্তিক প্রাইভেট টিউটর বাধ্যতামূলক। মানবিক বিভাগের ইংরেজি শিক্ষক আর মুখস্তবিদ্যা সম্বল করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা। গ্রামের অস্বচ্ছল পরিবারের শিশুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বা কোন মাদ্রাসায় শিক্ষাগ্রহণ করেন।
 
স্বাভাবিকভাবেই চলমান শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার গুণগতমানে বৈষম্য বিদ্যমান। তারপরে সরকারি-বেসরকারি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়। এসবের মধ্যে ইংলিশ মিডিয়াম, বাংলা মিডিয়াম, ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ড, আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড আরও কত কি। এসব প্রতিষ্ঠানে এদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মেধাবী শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে লেখাপড়া করতে আসবে। সুনামগঞ্জের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত সমৃদ্ধ না করলে এসব প্রতিষ্ঠানের আশপাশের এলাকায় ক্ষুদ্র দোকানদারি করতে হবে।
 
[হিমাদ্রি শেখর ভদ্র : সাংবাদিক, সময় টেলিভিশন, সুনামগঞ্জ]

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য