সুনামগঞ্জ , শনিবার, ০৩ মে ২০২৫ , ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
সুনির্দিষ্টভাবে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইলেন তারেক রহমান নারী শিক্ষার উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত সড়কে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই সংস্কার! সীমান্তে সক্রিয় গরু চোরাচালান চক্র ১৬৮ পিস ইয়াবাসহ রিকসাচালক গ্রেপ্তার সুবিপ্রবি’র স্থান পরিবর্তনের সুযোগ নেই : সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের মহান মে দিবস উদযাপিত তাপপ্রবাহ ও কালবৈশাখী হতে পারে কয়েক দফায় অর্ধকোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ সোমবার সকালে দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া জামালগঞ্জে ধান কাটতে গিয়ে হাওরে বজ্রপাতে নিহত ১ আজ মহান মে দিবস সুনামগঞ্জে বজ্রপাত আতঙ্ক: দশ বছরে মৃত্যু দেড় শতাধিক নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান শান্তির হাত বাড়াতে হবে, যুদ্ধের প্রস্তুতিও থাকতে হবে : প্রধান উপদেষ্টা সিলেট প্রদেশ বাস্তবায়ন পরিষদের মানববন্ধন শেখ রেহানা, পুতুল, জয় ও ববির বাড়ি-সম্পদ জব্দের আদেশ চিন্ময় ব্রহ্মচারীর জামিন স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার, ফের শুনানি ৪ মে উৎপাদন অনুযায়ী ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়নি, হতাশ হাওরাঞ্চলের কৃষক সুরমা’র গ্রাসে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি-সড়ক

এবার ১০ শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস, চাপ বাড়বে কৃষি অর্থনীতিতে

  • আপলোড সময় : ১১-১১-২০২৪ ০৩:৫২:৩৪ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১১-১১-২০২৪ ০৩:৫২:৩৪ অপরাহ্ন
এবার ১০ শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস, চাপ বাড়বে কৃষি অর্থনীতিতে
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক :: বিদায়ের পথে কার্তিক। ধীরে ধীরে নামছে তাপমাত্রা। উত্তরের জনপদে হালকা শীতের আমেজ। এছাড়া বৃষ্টি হতে পারে দেশের তিন বিভাগে। তারপর থেকে কমতে শুরু করবে তাপমাত্রাও। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আভাস, চলতি মাসের মাঝামাঝিতেই শীত অনুভূত হতে পারে। আর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বয়ে যেতে পারে কয়েক দফা শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়ার তিন মাসব্যাপী পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তীব্র শীতে এবার গ্রামীণ অর্থনীতিতে চাপ বাড়াবে বলে মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবারের শীত মৌসুমে অর্থাৎ নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে দেশে আট থেকে ১০টি মৃদু (তাপমাত্রা ৮-১০ ডিগ্রি) থেকে মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে দুই থেকে তিনটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহে (৪-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) রূপ নিতে পারে। তবে তীব্র শীতের আগে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের আভাসও রয়েছে। এ সময় বঙ্গোপসাগরে দুই থেকে পাঁচটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে এক-দুটি নি¤œচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এক মৌসুমে এত বেশি শৈত্যপ্রবাহের কারণে দেশের কৃষি অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণও এতে কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. এএইচএম সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক দুর্বিপাকে যেসব দেশ পড়ছে বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। আবহাওয়ার পরিবর্তনের ধারা এখানে অনেক বেশি বাড়ছে। শৈত্যপ্রবাহ তার মধ্যে অন্যতম। এবারের শীতে ১০-১৩ বার শৈত্যপ্রবাহের মুখে পড়লে এখানকার কৃষি অর্থনীতি চাপের মুখে পড়বে। আমাদের এখানে অনেক ধরনের শাক-সবজি হয়। শীতকালীন এ ফসল দিয়ে বছরের দীর্ঘ সময়ের সবজির চাহিদা পূরণ হয়। আলুর ওপর অনেক প্রভাব পড়বে। বন্যার কারণে এরই মধ্যে বেশকিছু অঞ্চলের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, অর্থনীতিতে কভ ওয়েব মডেল আছে, যেটাকে আমরা মাকড়সার জাল মডেল বলে থাকি। যেমন বাজারে যে পণ্যটির দাম বেশি থাকে কৃষক সেটি চাষে আগ্রহী বেশি হন। এবার যেহেতু আলুর দাম বেশি, কৃষকের আগ্রহও এ সবজি ঘিরেই। তবে শৈত্যপ্রবাহের কারণে আলু চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার শীতের রোগ প্রতিরোধে ওষুধ ব্যবহার করতে গিয়ে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে। এটা একটা উদাহরণ। এ রকম সব সবজিতেই বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। সরকারকে এর জন্য পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। এসব তথ্য সময়ে সময়ে পৌঁছে দিতে হবে কৃষকদের কাছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি শীত নামলেও এর তীব্রতা বাড়তে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে বলে আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। উত্তরাঞ্চলে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ঘন কুয়াশার সঙ্গে শীত অনুভূত হতে পারে। যদিও গ্রামাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী এলাকায় এরই মধ্যে কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। রাজধানীতে শীত পড়তে পারে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশে কেবল শৈত্যপ্রবাহই নয়, ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনাও বাড়ছে বলে জানান পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেশে শৈত্যপ্রবাহ সাধারণত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির দিকে বেশি হয়। কিন্তু আবহাওয়া অফিস এবার পূর্বাভাস দিয়েছে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে এ শৈত্যপ্রবাহ চলতে থাকবে। চলতি বছরের মার্চে যে হিটওয়েব হলো, বিগত দিনে এত বেশি হিটওয়েবের মুখোমুখি আমরা হইনি। এটা অস্বাভাবিক ঘটনা ছিল। শৈত্যপ্রবাহেও একই পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি। আমাদের আবহাওয়া চরমভাবাপন্নের দিকে যাচ্ছে। শৈত্যপ্রবাহের কারণে দেশের কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হবে উল্লেখ করে এ ভূগোলবিদ বলেন, নভেম্বরে পানি নামার পর পুরোপুরি শীতের মৌসুম শুরু হওয়ার আগে যেসব সবজি চাষ করা হয়, বীজ বপন হয়, সেগুলোয় এবার ব্যাঘাত ঘটবে। পর্যাপ্ত সূর্যের আলো না পড়ার কারণে সরিষা, পেঁয়াজ, রসুনের মতো ফসলের অঙ্কুরোদ্গম ও বৃদ্ধিটা খুব ভালো হবে না। শীতে বেশকিছু বাড়তি রোগব্যাধি দেখা যায়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য এ সময়টা বেশ জটিলতা তৈরি করে। ‘কোল্ড ওয়েভ ইনডিউসড মর্টালিটিস ইন বাংলাদেশ: ¯প্যাটিওটে¤েপারাল অ্যানালাইসিস অব ২০ ইয়ার্স ডাটা, ২০০০-২০১৯’ শীর্ষক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে জানুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এর পরই রয়েছে ডিসেম্বর। গবেষণার দুই দশকে ৮১টি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে দেশের ওপর দিয়ে। এ সময়ে কিছুটা শৈত্যপ্রবাহ বৃদ্ধির প্রবণতাও দেখা গেছে। দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণায়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছে ২০১৮ সালে। ওই বছরের ৮ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বনি¤œ তাপমাত্রার রেকর্ড। ওইদিন রংপুর বিভাগের আট জেলার সবক’টিতেই সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রির কম ছিল। সে বছরও দফায় দফায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে দেখা যায়। সাম্প্রতিক সময়গুলোয় দ্রুতই তাপমাত্রার উত্থান-পতন ঘটছে। গত বছরও দেশজুড়ে ছয়টি শৈত্যপ্রবাহ হলেও এবার জানুয়ারির মধ্যেই ১০টির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, রংপুর অঞ্চলে এ সময় দিনে গরম এবং রাতে ঠা-া অনুভূত হয় এবং প্রত্যন্ত এলাকায় রাতের বেলায় ও সকালের দিকে হালকা কুয়াশা পড়ে। তবে ১৫ নভেম্বরের পর থেকে ঠান্ডা বেশি অনুভূত হতে পারে। ২০ নভেম্বরের পর থেকে ঘূর্ণিঝড় হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে আলু চাষে প্রভাব পড়বে বলে জানান পঞ্চগড় সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুন্নবী। তিনি বলেন, বর্তমান আবহাওয়ায় জমির ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না। তবে আগামীতে ঘূর্ণিঝড়ের যে আভাস আছে তাতে উত্তরাঞ্চলের বিশেষ করে আলু, গম, আগাম সরিষা ও সবজির ক্ষতি হতে পারে। আবার ঘন কুয়াশা অব্যাহত থাকলে এখানে আলু, গম ও ধানেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স