সুনামগঞ্জ , বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫ , ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
প্রশাসনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা থেকে গায়েব জেলার বহু খাল নির্বাচনের জন্য বিএনপি পুরোপুরি প্রস্তুত : কয়ছর এম আহমদ বিশ্বম্ভরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত শান্তিগঞ্জে ফুটবল খেলা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৪০ দেশ যেন মৌলবাদের অভয়ারণ্য না হয় : তারেক রহমান সত্যশব্দের বর্ষার আয়োজন ‘বাদল গেছে টুটি’ দিরাই থানা ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ইউকের ফ্যামিলি গ্যাদারিং অনুষ্ঠিত জনগণের ভোগান্তি কমিয়ে দ্রুত সেবা নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপি সরকার গঠন করবে : কয়ছর এম আহমেদ জামালগঞ্জে উড়ালসড়ক প্রকল্প পরিদর্শনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা তাহিরপুরে তোপের মুখে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শান্তিগঞ্জে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শোভাযাত্রা জাতি-ধর্মে ভেদাভেদ থাকবে না, এই দেশ সবার : সেনাপ্রধান বর্ণাঢ্য আয়োজনে জন্মাষ্টমী উদযাপিত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৬ লেনের কাজ দ্রুত সম্পন্নের দাবি সুনামকণ্ঠ সাহিত্য পরিষদের ‘সাহিত্য আড্ডা’ অনুষ্ঠিত ফুটবল খেলা নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ৫ ফেব্রুয়ারিতে সুষ্ঠু-সুশৃঙ্খলভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবে : ধর্ম উপদেষ্টা ভোট গণনার আগ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা আছে : গয়েশ্বর রায় বেহাল সড়কে স্কুলে যেতে ভোগান্তি শিক্ষার্থীদের

বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রাম

  • আপলোড সময় : ২০-০৩-২০২৫ ০৯:৩৬:০২ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২০-০৩-২০২৫ ০৯:৩৭:১৫ পূর্বাহ্ন
বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রাম
মোহাম্মদ আব্দুল হক
বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতা শব্দ দুটির সাথে দীর্ঘ ধারাবাহিক সংগ্রাম ও বিজয়ের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও স্বাধীনতার আগে-পরে রয়েছে প্রায় আটাত্তর বছরের সংগ্রামের পথচলা। এই পথের সর্বশেষ সংযোজন ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লব। যদিও আবেগের সাথে ওই বিপ্লবে বিজয়ী ছাত্র জনতা এটিকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে স্লোগান দিয়েছেন তারপরও এ-কথা সকলেই বুঝতে সক্ষম কোনো দেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতা প্রকৃত অর্থে একবারই হয়। ছাত্র-জনতার এই আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে বলতেই হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয়ের রয়েছে এক জ্বলজ্বলে ইতিহাস। আমরা ওই ইতিহাস অস্বীকার করতে পারি না। সেজন্যে আমরা প্রতি বছর ২৬ মার্চ স্মরণ করি এবং উদযাপন করি গভীর শ্রদ্ধার সাথে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস আমাদেরকে দেশাভ্যন্তরেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে ও নতুন করে আন্দোলন করতে অনুপ্রেরণা জোগায়। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বারবার এদেশের ছাত্র জনতা স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট শাসকদের জুলুম ও বিভিন্ন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে। কাজেই আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম ও ধারাবাহিক আন্দোলনের ইতিহাস বারবার পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা দরকার। এ দেশের জনগণের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বিজয়ের ইতিহাস দীর্ঘ হলেও মোটামুটি সকলের জন্য ব্রিটিশ ভারতের পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তির মাইলস্টোন ১৯৪৭ সালের ভারত-পাকিস্তান ভাগের সময় থেকে কিছু কিছু বিষয় জেনে রাখা অত্যাবশ্যক। জানা আছে, সমগ্র ভারত উপমহাদেশে এক সময় ব্রিটিশ শাসন চলেছিল। তারপর দীর্ঘ প্রায় দুই শত বছরের ব্রিটিশ ভারতের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে এ অঞ্চলের মানুষের মুক্তি ঘটে ১৯৪৭ সালে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান স্বাধীন হয় পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানই আমাদের বর্তমান বাংলাদেশ। ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হলেও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালির মুক্তি মিলেনি। আমরা আবারও নতুন শোষক দ্বারা নানানভাবে নির্যাতনের শিকার হই। তারপর থেকে পাই ইতিহাসের নানা পরতে পাকিস্তানি শাসকদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালির সংগ্রামের ধারাবাহিক ঘটনাসমূহ- বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে এ অঞ্চলের মানুষের বিজয়কে পাকিস্তানি শাসকদের মেনে না-নেয়া ইত্যাদি। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে এ অঞ্চলের মানুষের বিজয় হয়, কিন্তু তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক দল তা মেনে নিতে নানান টালবাহানা শুরু করে। পাশাপাশি বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলনও দানা বাঁধতে থাকে। ছাত্র-জনতা সচেতন থাকে। ১৯৭১ সালের মার্চের প্রথমেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ঢাকায় সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। তৎকালীন সরকার কর্তৃক জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করায় মিছিল চলতে থাকে। প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠে ঢাকা নগরী। তখন দলমত নির্বিশেষে স্বাধিকারের প্রশ্নে সবাই ঐক্যজোট। সচেতন ছাত্র নেতৃত্ব জ্বলে উঠে, বিদ্রোহী হয়ে উঠে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্র নেতৃত্বের দ্বারা বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা জাতীয় পতাকা উড়ানো হয়। এরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সূর্য সন্তান। সেদিন সচিবালয়েও পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে ফেলা হয় এবং বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উড়ানো হয়। সেই পতাকা বাংলার আকাশ থেকে আর নামেনি। সংগ্রাম চলতে থাকে। কিন্তু পাকিস্তানের শাসক দল আমাদের অধিকার দিতে রাজি হয় না। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস রক্তে গড়া ইতিহাস এবং সাহসী ইতিহাস। ওই ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ। ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঘোষণা করলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” এই ঘোষণা কোনো অপ্রত্যাশিত ঘোষণা ছিলো না। সময়ের সঠিক ঘোষণা ছিলো সেটা প্রমাণিত হয়েছে বিজয়ে। বাঙালির নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন বিশাল জনসমুদ্র তাদের নেতার কণ্ঠে এমন ঘোষণার অপেক্ষা করছে। এরপর আসে ইতিহাসের ভয়াবহতম কালরাত ২৫ মার্চ ১৯৭১। একদিকে বাঙালির নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে ঢাকা থেকে নিয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তানে, আর অন্যদিকে রাতের আঁধারে ঢাকার ঘুমন্ত নিরীহ মানুষের উপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়। মানুষ মারে আর ট্যাঙ্কের আঘাতে নগরীতে চলে ধ্বংসলীলা। তবে বাঙালির নেতৃত্ব থেকে আগেই স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক এসেছিল। তাই বীর বাঙালি প্রথমে হতচকিত হলেও ভয়ে একেবারে ভীত না-হয়ে ধীরে ধীরে সংগঠিত হয়। বাংলার দামাল ছেলেরা দেশের আরও ত্যাগী নেতা ও বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শে যুদ্ধ - কৌশল ঠিক করে দেশের স্বাধীনতার জন্যে জীবন বাজি রেখে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অস্ত্র, গুলি, বোমা, সামরিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত পাকিস্তানি হায়েনার দল এবং ওদের সাথে জোট বাঁধা এদেশের মাটিতে লালিত অকৃতজ্ঞ রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর বিরুদ্ধে বীর বাঙালি অল্প-স্বল্প ট্রেনিং নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমাদের একতা ও দৃঢ়তায় ২৫ মার্চের কালরাত অর্থাৎ ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৬ মার্চ থেকে দীর্ঘ ৯ মাসে যুদ্ধে যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় পেয়েছি। এজন্যই ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। এরপর চলে গেছে চুয়ান্ন বছর। আমাদের দুর্ভাগ্য স্বাধীন দেশেও আমরা বারবার সামরিক সরকার, স্বৈরাচারী সরকার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে হারিয়েছি গণতন্ত্র, হারিয়েছি ন্যায্য কথা বলার স্বাধীনতা, হারিয়েছি ভোটাধিকার। সেজন্যে আমাদের ছাত্র জনতাকে বারবার সংগ্রাম করতে হয়েছে। এমনই সংগ্রামের পথ ধরে বর্তমানে বাংলাদেশে নোবেলজয়ী প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে আছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। জনগণের চাওয়া যে সিস্টেমের কারণে বারবার ক্ষমতাসীনরা গণতন্ত্র থেকে সরে যেতে পারে, টাকা ও স¤পদ বিদেশে পাচার করে সহজে এবং জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ভোটাধিকার কেড়ে নেয়, সরকারি দলের মানুষের চাঁদাবাজি ও মাস্তানি বেড়ে যায়, বিরোধী দলকে অন্যায় হয়রানি করে, উন্নয়ন কাজে ধীরগতি হয় সেসব সিস্টেমের সংস্কার যেন করতে পারে প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার। এরপর একটি স্বচ্ছ ভোটের মাধ্যমে আসুক একটি নির্বাচিত সরকার। আমাদের এখন সবচেয়ে প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, চিকিৎসার দুরাবস্থা দূরীকরণ, সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নারী নির্যাতন বন্ধ করা, ফুটপাত দখল মুক্ত করা, বাসা ও মার্কেট বানানোয় যথাযথ আইন মানা হচ্ছে কি-না তা তদারকি করা, কিশোর গ্যাং এর উৎপাত বন্ধ করা, তুলনায় বড়ো দলের দলীয় প্রভাবে নেতা কর্মী সমর্থক দ্বারা চাঁদাবাজি বন্ধ করা, বছরের পর বছর হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়া স্থায়ীভাবে বন্ধ করা, নদী ভাঙন রোধ ও নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা, ছাত্রদের আবাসিক হল অস্ত্র ও দখল মুক্ত রাখা এবং সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সার্বক্ষণিক নজরদারি বাড়ানো। এভাবেই আমাদের স্বাধীনতা হয়ে উঠবে অর্থবহ। [লেখক : মোহাম্মদ আব্দুল হক, কলামিস্ট ও সাহিত্যিক]

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
প্রশাসনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা থেকে গায়েব জেলার বহু খাল

প্রশাসনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা থেকে গায়েব জেলার বহু খাল