সুনামগঞ্জ , শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫ , ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
সড়ক নিরাপদ হবে কবে? গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তিতে গ্রাফিতি প্রদর্শনী উদ্বোধন করলেন দুই শিক্ষার্থী সিলেট বিমানবন্দরে বোর্ডিং ব্রিজের চাকা ফেটে কর্মচারী নিহত দেশে যেন উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিতে না পারে : তারেক রহমান পিকআপ-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে যুবক নিহত জামালগঞ্জের ৬ ইউনিয়নে বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘিরে সমালোচনা বৃত্তি পরীক্ষায় কিন্ডারগার্টেন বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে বিজয়ী করতে হবে : আনিসুল হক হাওরের উন্নয়নে সঠিক পরিকল্পনা চাই: সালেহিন চৌধুরী শুভ ১০২ এসিল্যান্ড বিভাগীয় কমিশনারের অধীনে ন্যস্ত ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সাচনা বাজারের হাসপাতাল চালুর দাবি অদম্য মেধাবী অর্পা’র স্বপ্নযাত্রা কি থেমে যাবে? গভীর সংস্কার না করলে স্বৈরাচার ফিরে আসবে : প্রধান উপদেষ্টা সাগরপথে ইউরোপে যান সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের কমিটি গঠনের প্রতিবাদে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’দের বিক্ষোভ জগন্নাথপুরে ৩ আসামি গ্রেফতার হাওরে পানি নেই, সংকটে কৃষি ও মৎস্য সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিভে গেল আরও এক শিক্ষার্থীর জীবন প্রদীপ খেলাধুলাই পারে মাদকের ছোবল থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে : কয়ছর এম আহমদ

ক্ষত-বিক্ষত যাদুকাটা ও প্রশাসনিক কর্তব্যচ্যুতি প্রসঙ্গে

  • আপলোড সময় : ১০-০৪-২০২৫ ১২:৪০:২৮ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১০-০৪-২০২৫ ১২:৪০:২৮ পূর্বাহ্ন
ক্ষত-বিক্ষত যাদুকাটা ও প্রশাসনিক কর্তব্যচ্যুতি প্রসঙ্গে
সংবাদ প্রতিবেদনের শিরোনামটি, ‘ক্ষত-বিক্ষত যাদুকাটা’। দুঃসংবাদ বটে, কিন্তু বড়বেশি পুরনো। যতোটাই পুরনো ততোটাই কেবল মানবপ্রজাতির জন্য নয়, সমগ্র প্রাণ-প্রকৃতির জন্যে ভয়ানক ক্ষতিকর। অন্তত প্রকৃতিবিজ্ঞান তাই বলে। বিজ্ঞান ইতোমধ্যেই বলে দিয়েছে পৃথিবী একটি মৃত্যুপথযাত্রী গ্রহ। এই মৃত্যুযাত্রার কর্মযজ্ঞের যৎকিঞ্চিৎ বাস্তবতা পরিলক্ষিত হয় যখন বালুপাথরখেকোরা যাদুকাটাকে খুবলে খায় এবং যাদুকাটাকে রক্ষায় নিয়োজিত মাঠপর্যায়ের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের কর্ণধার তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘যাদুকাটা নদীর পাড় কাটা বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছে প্রশাসন।’ এই চমৎকার নীতির ছত্রছায়ায় চলছে কয়েক যুগ ধরে নিরবচ্ছিন্ন বালুপাথর লুটের মচ্ছব। তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা ইজারাদারদের অনুরোধ করেছি, সীমানার বাইরে থেকে বালু উত্তোলন না করার জন্য। এটি সীমান্তবর্তী এলাকা উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে এবং দুর্গম হওয়ায় অভিযানে যাওয়ার পথেই দুর্বৃত্তরা খবর পেয়ে যায়। এসময় তারা অবস্থান থেকেও সরে যায়। ফলে যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে, তাদের ধরা বা গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় না। তবুও পুলিশ এবং উপজেলা প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। যাদুকাটার পাড়ের পরিবেশ-প্রতিবেশ ভালো রাখতে চাই আমরা।’ এবংবিধ কথাই সাধারণত বলা হয়ে থাকে। আসলে দায় এড়িয়ে স্বার্থোদ্ধারে বুঁদ হয়ে থাকার এর চেয়ে ভালো কোনও পদ্ধতি নেই, এই পদ্ধতিই সেরা এবং জনগণকে ধোঁকা দিয়ে তাদেরকে প্রতারণার জালে আটকে শাসন-শোষণ অব্যাহত রাখার জন্যে রাজনীতিক সমাজের পক্ষ থেকে এমনটাই করে আসা হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। ইতিহাস তার সাক্ষী। অভিযোগ উঠেছে দেশে আধিপত্য বিস্তারকারি প্রধান প্রধান রাজনীতিকদলের কিছু জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সমাজপতি, ধনাঢ্য পুঁজিপতি ব্যবসায়ী ও তাদের সাঙাত সন্ত্রাসীরা এই বালুপাথর লুণ্ঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং আছেন। সমাজবিজ্ঞানীরা সমাজে চলতে থাকা এবংবিধ কর্মকা-কে ‘কাঠামোগত সহিংসতা’ বলে অভিহিত করেছেন। এ ক্ষেত্রে যার অন্তর্নিহিত অর্থ হলো যাদুকাটাকে দামি পণ্য করে তোলা হয়েছে, প্রকারান্তরে এই নদীকে বিক্রি করে ধনীদের ধনভা-ার স্ফীত করা চাই। রাজনীতি, আইন ও আইনের প্রয়োগ এই ধনীদের তল্পিবাহক তাঁবেদারির কাজ করছে মাত্র। সুতরাং পুঁজি কিংবা ধনকুবেরদেরকে প্রতিহত করা না গেলে কীছুতেই যাদুকাটার উপর চড়াও হওয়া এই কাঠামোগত সহিংসতাকে ঠেকানো যাবে না। জনপ্রতিনিধি, সামরিক-বেসামরিক আমলা, সমাজপতি নির্বিশেষে ধন কে না চায়। এই কারণে এখানে যাদুকাটার বালুপাথর লুণ্ঠন সম্পন্নের জন্যে একটি শক্তিশালী চক্র গড়ে উঠেছে। তার ইঙ্গিত মিলে যখন প্রতিবেদনে ‘ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সুনামগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম ছদরুল এই সহিংসতার রূপকল্পকেই প্রকারান্তরে বিতৃত করেন। তিনি বলেছেন, ‘নদীর পাড়ের মানুষের কর্মসংস্থানের জায়গা ছিলো যাদুকাটা। হাতে অর্থাৎ ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে বালু তুললে বহু বছর এখানে কর্মসংস্থান হতো তাদের। এই নদীটি একসময়ে প্রস্থে ছিল ৫৭ মিটার, এখন তাকালে মনে হবে সাগর। এই অবস্থার পেছনে একটি লুণ্ঠনকারী চক্র রয়েছে। তারা দিনে দিনে নদীতে লুটপাট বাড়িয়েছে। কোনো শাস্তির ব্যবস্থা হচ্ছে না। একারণে নদীর তীর ভাঙছে। মানুষের ঘরবাড়ি সড়ক বিলীন হচ্ছে। এদের চিহ্নিত করতে হবে। যারা মূল হোতা তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। যাতে এলাকার পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং নদীকে রক্ষা করা যায়।’ এই কথা নতুন কোনও কথা নয়, বরং পুরনো কথারই চর্বিতচর্বণ, কিন্তু কাঠামোগত সহিংসতার শিকার জনসমাজের মানুষদের (বেসরকারি লোকজন) জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও মনে হয়, প্রশাসন এই কথায় কোনওই কর্ণপাত করবে না। তারপরও এর সঙ্গে আরও যোগ করা দরকার যে, ‘চোরকে চুরি করতে বলে দিয়ে গৃহস্থকে সজাগ থাকতে বলা’র প্রশাসনিক নীতি পরিহার করে যাদুকাটা থেকে বালুপাথরখেকোদের তাড়ানোর কাজে নামতে হবে এবং ‘আমরা ইজারাদারদের অনুরোধ করেছি, সীমানার বাইরে থেকে বালু উত্তোলন না করার জন্য।’ কূটকৌশলে প্রশাসনিক কর্তব্যচ্যুতির এই নীতিটিকে বদলে সীমানার বাইরে বালু উত্তোলন করা হলেই সংশ্লিষ্ট ইজারাদারকে ধরে শাস্তি দিতে হবে। প্রশাসন তা করছে না কেন, কার স্বার্থে এবং কোন স্বার্থ পেয়ে? প্রশ্নটা করে আপাতত সম্পাদকীয়র ইতি টানছি।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
সড়ক নিরাপদ হবে কবে?

সড়ক নিরাপদ হবে কবে?