সুনামগঞ্জ , মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫ , ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
অদক্ষ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের দৌরাত্ম্যে বাড়ছে দুর্ঘটনা হাসি ফুটলো সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশু রুমেজার মুখে সাবেক এমপি নাছির চৌধুরী হাসপাতালে ভর্তি করোনায় একজনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ২৫ মোল্লাপাড়া ইউনিয়নে বিএনপি’র কর্মীসভা জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে ‘আমার কণ্ঠ আমার অধিকার’ ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত প্রতিপক্ষের হামলায় ছোট ভাই নিহত, বড় ভাই হাসপাতালে টাঙ্গুয়ার হাওর ‘সোনার ডিমপাড়া হাঁস’ নয় নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা চলবে না : আব্দুর রব ইউসুফি আলোচনা হলে সরকারের ‘ভাব’ বুঝতে পারবে ইসি : সিইসি হাওর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, গ্রেফতার ৭ জামালগঞ্জে ফুটবল টুর্নামেন্ট সম্পন্ন জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত উঠানে পড়েছিল যুবকের রক্তাক্ত লাশ : আটক ১ জামালগঞ্জে মাদক নির্মূলে গ্রামবাসীর প্রতিরোধ সভা: সর্বাত্মক সহযোগীতার আশ্বাস ওসি'র চৌধুরী মনসুর আহমদ আর নেই ভাতিজার হাতে চাচি খুন সিলেটের কোনো পাথর কোয়ারি আর লিজ দেওয়া হবে না : পরিবেশ উপদেষ্টা অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনে বিপদে টাঙ্গুয়ার হাওর মরিচক্ষেতে মিললো গ্রেনেড, নিষ্ক্রিয় করলো সেনাবাহিনী
হাওরে ধান কাটার যন্ত্র বিতরণ নিয়ে প্রতারণা

ভর্তুকির অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাত করে এক যন্ত্র দুই জনের নামে বিতরণ!

  • আপলোড সময় : ২৮-০৪-২০২৫ ০৪:৫০:২৬ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৮-০৪-২০২৫ ০৪:৫৫:৪০ পূর্বাহ্ন
ভর্তুকির অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাত করে এক যন্ত্র দুই জনের নামে বিতরণ!
বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জে সরবরাহকারী কোম্পানি হাওরে ধান কাটার একটি হার্ভেস্টর যন্ত্র দুই কৃষককে বরাদ্দ দিয়ে সরকারের অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে

এ ঘটনায় জড়িত যন্ত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসকিউ ট্রেডিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির স্থানীয় কর্মকর্তা ও কৃষি বিভাগের লোকজন। এ ঘটনায় জেলায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগ গত বুধবার যন্ত্রটি উদ্ধার করার পর প্রতিবাদী কৃষকের উপর চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের মামলা দায়ের করে হয়রানি করছে কোম্পানির লোকজন।

জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে এসকিউ ড্রেডিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি প্রদত্ত ১৩ ও ১৬ ডিএসিডিওএনজি (ইঞ্জিন ও চেসিজ নম্বর) কম্বাইন হার্ভেস্টর ২০২২ সালের ১৬ জুন অর্থ বছরের ১৪ দিন আগে হস্তান্তর করে কৃষি বিভাগ। একটি যন্ত্র সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোলেরগাও গ্রামের কৃষক আব্দাই মিয়ার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কৃষকের সঙ্গে চুক্তি করে বিতরণ করার কথা থাকলেও কোম্পানির লোকজন কোনও লিখিত চুক্তিই করেনি। শুধু লোকদেখানো হস্তান্তর করলেও যন্ত্রটি পরে দিবে বলে কৃষককে হয়রানি করতে থাকে। যন্ত্র কৃষককে না দিয়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলার কাইক্যারপাড় গ্রামের আরেক কৃষককে যন্ত্রটি দিয়ে দেয় কোম্পানির সেলস ম্যানেজার মিনহাজ আহমদ ও রিকভারি অফিসার আতিকুর রহমান আতিক। তাদেরকে সহযোগিতা করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমান।
জানা গেছে, ২০২২ সালের বন্যার ভয়াবহতা দেখিয়ে এসকিউ কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা যন্ত্রটি হস্তান্তর না করে তাদের হাতে রেখে দেন। সরকারের কাছ থেকে দুই কৃষককে দুটি যন্ত্র দেওয়ার কথা বলে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ভর্তুকি হাতিয়ে নেয় কোম্পানি। বরাদ্দ পাওয়া কৃষক যন্ত্র ফেরত চাইলে কাল ক্ষেপণ করতে থাকে কোম্পানির লোকজন। এক পর্যায়ে কৃষক হাল ছেড়ে দেন।
এ ঘটনায় ওই কৃষক উপজেলা কৃষি অফিসকে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন গত বছর। কৃষি বিভাগ শুনানী করলেও বিষয়টি সমাধান হয়নি। তাই সরকারি ভর্তুকির ২২ লক্ষ টাকা কৃষককে ফেরত দিতে তারা একাধিক চিঠি দেয়। এতে ওই কৃষক বারবার কোম্পানির লোকদের যোগাযোগ করলে তারা বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যায়।
সম্প্রতি সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগ বরাদ্দকৃত যন্ত্রের আপডেট তথ্য করার সময় কৃষককে যন্ত্রটি এনে দিতে নির্দেশনা দেয়। এতে হন্য হয়ে ওই কৃষকের ভাই শাহ আলম দিলোয়ার জেলাব্যাপী যন্ত্রটি খুঁজতে থাকেন। গত বুধবার শান্তিগঞ্জ উপজেলার কাইক্যারপাড় গ্রামের মসদ্দর আলীর বাড়িতে গিয়ে জানতে পারেন আব্দাই মিয়ার যন্ত্রটি তাকে দিয়েছেন শান্তিগঞ্জ উপজেলার কোম্পানির মিনহাজ ও আতিক। ওই কৃষকের সঙ্গেও প্রতারণা করেছে কোম্পানি ও কৃষি বিভাগ। তাকে যথাসময়ে যন্ত্রটি না দিয়ে গত বছর পুরনো এই যন্ত্রটি দেয় বলে অভিযোগ করেন কৃষকের ছেলে আব্দুল হামিদ।
বুধবার বিকেলে যন্ত্রটি সদর উপজেলার সাক্তারপাড়া গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয়। এদিকে প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ পেলে কৃষকের প্রতিবাদী ভাই শাহ আলম দিলোয়ারকে ফাঁসাতে শান্তিগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে মারধর ও চাঁদাবাজির মামলা করেছেন কোম্পানির রিকভারি অফিসার আতিক। এখন পুলিশ দিয়ে প্রতিদিন তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। আব্দাই মিয়ার ছোট ভাই শাহ আলম দিলোয়ার বলেন, আমরা চার ভাই আলাদা পরিবারে বসবাস করছি গত ৪০ বছর ধরে। আমার ভাই আব্দাই মিয়া একটি যন্ত্র বরাদ্দ পান। কিন্তু বিতরণ দেখিয়ে যন্ত্র দেয়নি মিনহাজ ও আতিকসহ কোম্পানির লোকজন। পরে এই যন্ত্র কাইক্যারপাড় গ্রামে আরেক উপজেলার কৃষককে দিয়ে দেয়। একটি যন্ত্র দিয়ে সরকারের কাছ থেকে দুটি যন্ত্রের অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। আমি আমাদের যন্ত্রটি উদ্ধার করায় তারা এখন আমার নামে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আমার অন্য ভাইয়ের যন্ত্রগুলোরও কোন ওয়ারেন্টি সেবা দেয়নি। যন্ত্রগুলো কাজে আসেনি। চারটি যন্ত্র দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কোম্পানির লোকজন।
কাইক্যারপাড় গ্রামের কৃষক মসদ্দর আলীর ছেলে আব্দুল হামিদ বলেন, আমরা গরিব চাষী। ২২ সালের বন্যার আগের দিন আমার বাবার নামে যন্ত্রটি বিতরণ হলেও আমরা আনিনি। পরে কোম্পানিও যোগাযোগ করেনি। বন্যার এক বছর পর যোগাযোগ করলে মিনহাজ ও আতিক আমাদেরকে পুরনো একটি নষ্ট যন্ত্র দেয়। আমরা নেইনি। পরে আমাদের ওই যন্ত্রটি দেয়। এটি গত বুধবার উদ্ধার করে কৃষি বিভাগ প্রকৃত মালিককে দিয়ে দিয়েছে। এই প্রতারণার সঙ্গে শান্তিগঞ্জের সাবেক কৃষি অফিসারও জড়িত। আমি যন্ত্র বাবত চার লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এখন হাওরে ধান কাটার সময়ে ধান কাটতে পারছিনা।
এসকিউ ট্রেডিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সেলস ম্যানেজার মিনহাজ আহমদ এক উপজেলার কৃষকের যন্ত্র আরেক উপজেলার কৃষককে কিভাবে দেওয়া হলো এবং সরকারের প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ভর্তুকি তুলে নেওয়া হলো এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।
তবে ওই যন্ত্র কিভাবে অন্য উপজেলার লোক পেল তিনি জানেন না বলে জানান। যন্ত্র দেওয়া হলেও কেন চুক্তি করা হলোনা জানতে চাইলে তিনি কোন জবাব দিতে পারেননি।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, এই যন্ত্রটি কোথায় আছে আমরা জানতাম না। দীর্ঘদিন ধরে ওই কৃষককে নোটিশ পাঠিয়ে সরকারি ভর্তুকি ফেরত দেওয়ার কথা বলেছি। অবশেষে কৃষককে নিয়ে সাক্তারপাড়া থেকে যন্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা আজাদ বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস আমাকে বিষয়টি অবগত করেছে। আমরা ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন মহলকে লিখবো।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
অদক্ষ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের দৌরাত্ম্যে বাড়ছে দুর্ঘটনা

অদক্ষ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের দৌরাত্ম্যে বাড়ছে দুর্ঘটনা