পথে যেতে যেতে : পথচারী
- আপলোড সময় : ১৩-০৫-২০২৫ ০৮:০১:২৪ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৩-০৫-২০২৫ ০৮:০১:২৪ পূর্বাহ্ন

‘মা’ ছোট্ট একটি শব্দ, অথচ এর মর্মার্থ কতো ব্যাপক তা আমরা বুঝি না। পৃথিবীতে মায়ের তুলনা আর কিছুতেই হয় না। আর প্রতি বছর মে মাসের ২য় রোববার পালন করা হয় বিশ্ব ‘মা’ দিবস। মাকে নিয়ে অনেক কথা অনেক গল্প আমাদের মাঝে চালু আছে। আমরা জন্মেই দেখি মাকে। মা সে কী এক আদর, কী এক ভালোবাসা তা অন্য কাউকে বোঝানোর বিষয় নয়। আমরা প্রত্যেকেই তা অনুভব করি।
ইংরেজ মনীষী হাওয়ার্ড জনসন সেই কবে বলে গেছেন, ‘যে গৃহে মা নেই, সে গৃহের আকর্ষণ নেই।’ তা’হলে দেখা যাচ্ছে একটি গৃহের সাজ-সজ্জার আকর্ষণও মা। ইংরেজ মনীষী জন অস্টিনের মতে- ‘যে গৃহে মা নেই, সে গৃহে ¯েœহের শীতল আকর্ষণ নেই।’ প্রায় সমার্থক সে সকল কথা। ইংরেজ কবি ক্রিস্টিনা রোসেটির মতে- ‘ যে ঘরে মা আছে, সে ঘরে শৃঙ্খলা আছে।’ মাকে নিয়ে এ সকল কথা মনে পড়ছিল মে মাসের ২য় রোববার বিশ্ব ‘মা’ দিবস উপলক্ষে।
মাকে তো আমরা প্রতিদিনই দেখি। কিন্তু তারপরও মাকে দেখা শেষ হয় না। বললে খুব বাড়াবাড়ি হবে না যে, মা দিবসের ধারণাটি আমাদের মাঝে খুব বেশি প্রচলিত হয়নি। সমাজে মা একজন গৃহিণী হলেও ঘরে বাইরে সবকিছুই দেখেন তিনি। নিত্য কাজের মাঝে আমরা জীবন সংগ্রামে লিপ্ত প্রতিদিন। সন্তান জন্মের পর যে ভালোবাসা ¯েœহ মায়ের থাকে, তা কখনো কখনো অভাবের তাড়নায় থাকে না। আর তাইতো মাঝে মাঝে দেখি মা তার সন্তানকে সামান্য অর্থের বিনিময়ে অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এখানে মায়ের ভালোবাসা আদর সোহাগ পরাজিত হয়েছে এমনটি বলা যায় না। অভাবের তাড়না, পরিবেশ-পরিস্থিতি বাধ্য করেছে একজন মাকে এমনটি করতে। মায়ের আদর ¯েœহের কোনো তুলনা নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী বা একাধারে সাবেক ফার্স্টলেডি হিলারি ক্লিনটন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের দরিদ্র একজন মহিলা সন্তানের মধ্যে মায়া-মমতার কোনো পার্থক্য নেই। শুধু ব্যবধান অর্থ-বিত্তের।
মাকে আমরা প্রতিদিনই দেখি। তারপরও মাকে দেখার সাধ মেটে না। সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হয়ে দূর চলে গেলেও প্রযুক্তির বদৌলতে ভিডিও চিত্রের মাঝে মাকে আমরা দেখতে পাই। এমনই আবেগের বশবর্তী হয়ে প্রাচীন গ্রিস ও রোমে মাকে নিয়ে ভাবনার অবকাশ তৈরি হয়েছিল। তখনকার গ্রিসবাসীরা মাদার অব গড ‘রিয়া’র উদ্দেশ্যে একটি দিন নিবেদন করতো যা মাকে নিয়ে ছিল এক প্রকার বসন্ত উৎসব। আর রোমানরা তাদের দেবীকে মা ‘সাইবেলা’র উদ্দেশ্যে পালন করতো বার্ষিক উৎসব। ইউরোপে বড়দিনের পর এখন সবচেয়ে জমকালোভাবে পালন করা হয় মা দিবস। ইউরোপের গ-ি ছাড়িয়ে এশিয়া এবং আফ্রিকাতেও দিবসটি ব্যাপকভাবে পালিত হচ্ছে। বসন্ত উৎসব যখন দিনে দিনে প্রসার লাভ করছিল তখন সমাজে নতুন করে ভাবনা এলো মাকে নিয়ে।
মা দিবসকে জনপ্রিয় করার পেছনে অনেকেরই অবদান রয়েছে। তবে বিশেষভাবে মার্কিন সমাজকর্মী পেন্সিল ভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের একজন লেখক-গবেষক জুলিয়া ওয়ার্ড হাউ-এর নাম আসে ঘুরে ফিরে। তিনি দেশে যুদ্ধের বিরুদ্ধে নারীদেরকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি দিবসটিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করতে ব্যাপক প্রচারণা চালান। তার এই প্রচারণায় শরীক হন আরেকজন মা ভক্ত নারী অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস যাকে আধুনিক মা দিবসের ধারণার প্রবর্তক বলা হয়। তার মা আনা রিভিজ জার্ভিস মারা যান ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ৯ মে তারিখে। পিতাও মারা যান প্রায় ৩ বছর আগে।
বিশ্বে মা দিবস পালন নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি আছে। রোমনরা মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতো বছরের ১৫-১৮ মার্চ। বৃটেনে মা দিবস পালিত হয় মার্চ মাসের ২য় রোববার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস পালিত হয় মে মাসের ২য় রোববার। নরওয়েতে পালিত হয় ফেব্রুয়ারি মাসের ২য় সপ্তাহে। জর্জিয়ায় পালিত হয় ৩ মার্চ। ৮ মার্চ পালিত হয় দক্ষিণ কোরিয়া, আলবেনিয়া, রাশিয়া, আফগানিস্তান, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও ইউক্রেনে। ২১ মার্চ দিবসটি পালিত হয় ইরাক, কুয়েত, মিশর, জর্ডান, ওমান, ফিলিস্তিন, লেবানন, কাতার ও সৌদিআরবে। তবে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই মা দিবস পালিত হয় মে মাসের ২য় রোববার। আমরা আমাদের মাকে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জানাবো, পাশাপাশি বাবাকেও।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ