স্টাফ রিপোর্টার ::
হাওর এলাকায় অনুন্নত যাতায়াত, দারিদ্র, অবকাঠামো, শিক্ষক ও কর্মকর্তা সংকট, সচেতনতার অভাবসহ নানা কারণে সার্বিক শিক্ষাক্রম পিছিয়ে আছে। এসব সংকট থেকে উত্তরণে প্রয়োজন পরিকল্পিত উদ্যোগ। সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার বাস্তবতা, প্রতিবন্ধকতা ও করণীয় শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এই মত দেন। বুধবার দুপুরে শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে সামাজিক সংগঠন ‘জনউদ্যোগ’ এই আলোচনার আয়োজন করে। আলোচনায় বলা হয়, হাওরাঞ্চলের শিক্ষা ক্ষেত্রে রয়েছে বহু সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা। ব্রিটিশ আমলে যে সংকট ছিল এখনও তা আছে এবং আরও তীব্র হয়েছে। আয়োজক সংগঠনের আহবায়ক রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু’র সভাপতিত্বে আলোচনায় মূল বক্তব্য তুলে ধরেন সংগঠনের সদস্যসচিব সাইদুর রহমান আসাদ। লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, পুরো জেলায় এক হাজার ৪৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে বিচ্ছিন হাওরে রয়েছে ৫৮৬টি। এসব বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য নৌকা প্রয়োজন ৩৭৩ টিতে। জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক হাজার ৪৭৫ জন প্রধান শিক্ষকের মধ্যে ৩৪৯ জন নেই। সাত হাজার ২৬০ জন সহকারী শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও ৮৬৮টি পদ শূন্য। ৬৩ জন সহকারী শিক্ষা অফিসারের পদ থাকলেও রয়েছেন মাত্র ১৯ জন। ৪৪ জনের পদ খালি রয়েছেন। জেলায় রয়েছে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে সংকট। জেলায় কলেজ আছে ৩৩ টি। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৩৫টি, মাদরাসা রয়েছে ৯২টি। বক্তব্য আরও জানানো হয়, হাওরাঞ্চলে বেশিরভাগ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা প্রতিবন্ধকতার অন্যতম কারণ। দুর্গম এলাকা হওয়ায় অপ্রতুল যোগাযোগ ব্যবস্থা, বর্ষায় নৌ পরিবহন অপর্যাপ্ততা ও ঝুঁকিপূর্ণ। এই অঞ্চলের মানুষের এক ফসলি বোরো মৌসুম ছাড়া বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। দারিদ্রতার কারণে শহরমুখী হওয়ায় পড়ালেখায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। অনেক শিক্ষার্থীর মাঝ পথেই শিক্ষা জীবনের ইতি টানতে হয়। পরিবারের অসচেতনতার কারণে বিদ্যালয়ের উপস্থিতির সংখ্যাও কম। শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে ধর্মীয় গোড়ামী। বিশেষত গ্রামীণ নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে। বিদ্যালয়ে পড়ার সময় অনেক পরিবার মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এটিও একটি কারণ। অনেক শিশু মৌসুমী শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে। হাওরাঞ্চলে শিক্ষার এই সংকট থেকে উত্তরণে আলোচনা যে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয় সেগুলো হচ্ছে, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিচ্ছিন্ন স্কুলে যাতায়াতের জন্য নৌকার ব্যবস্থা করা। সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ। শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের শূন্য পদ পূরণ করা। বাল্যবিয়ে রোধে উদ্যোগ গ্রহণ। কর্মমুখী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। কৃষি ও মৎস্যজীবী কার্ডের মাধ্যমে রেশনিং ব্যবস্থা ও ভাতা চালু করা। প্রতি স্কুলে মিড ডে মিল চালু করা। উপবৃত্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ানো এবং অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করা। গোলটেবিল আলোচনায় অতিথি ছিলেন সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তি) সুনজিত কুমার চন্দ, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম, জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুব জামান। নির্ধারিত বিষয়ে আলোচনা করেন কবি ও লেখক সুখেন্দু সেন, শিক্ষক চিত্তরঞ্জন তালুকদার, আবুল কালাম আজাদ, আবদুস সাত্তার ও কানিজ সুলতানা, জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য্য, আয়োজক সংগঠনের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, উন্নয়নকর্মী শাহ কামাল, সাংস্কৃতিক কর্মী পল্লব ভট্টাচার্য প্রমুখ।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
হাওরাঞ্চলের শিক্ষা নিয়ে গোলটেবিল আলোচনা
সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন পরিকল্পিত উদ্যোগ
- আপলোড সময় : ১৫-০৫-২০২৫ ১২:৪৯:৪৩ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৫-০৫-২০২৫ ০১:১৭:০৪ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ