স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা নেই - এমন অবস্থা চলতে পারে না
- আপলোড সময় : ২২-০৬-২০২৫ ১২:০১:৫১ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২২-০৬-২০২৫ ১২:০১:৫১ পূর্বাহ্ন

স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। সংবিধান সেই অধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অথচ বাস্তবচিত্র ঠিক তার বিপরীত। সুনামগঞ্জ জেলার প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চলে অবস্থিত ৪৬টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এখন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এসব কেন্দ্র এখন সেবার আশ্রয়স্থল নয়, বরং সরকারি উদাসীনতা ও ব্যর্থতার নীরব স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এইসব কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছিল সমাজের প্রান্তিক, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এসব প্রতিষ্ঠানে নেই চিকিৎসক, নেই ঔষধ, নেই প্রশিক্ষিত জনবল। অনেক স্থানে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। যেসব কেন্দ্রে এক-দুজন থেকে গেছেন, তারা তাদের সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে বহু কেন্দ্র পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে।
চিনাকান্দির জামীলা বেগমের যে হাহাকার, তা একক কোনো গ্রামের নয় - তা গোটা হাওরাঞ্চলের। “আমরা গরীব, যদি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফ্রি চিকিৎসা আর ঔষধ পেতাম, তাহলে অন্তত বাঁচার একটা সুযোগ হতো” - এই আর্তনাদ আমাদের প্রশাসনের কর্ণগোচর হয় কি?
স্বাস্থ্যব্যবস্থার এই ধসের পেছনে দায়ী শূন্যপদে নিয়োগ না দেওয়া, চিকিৎসকদের গ্রামমুখী না করার নীতিগত ব্যর্থতা ও তদারকির অভাব। পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের পদ শূন্য থাকায় দায়িত্ব চলছে অতিরিক্ত হিসেবে, কিন্তু সেটিও কার্যকর তদারকি আনতে পারছে না। বিশ্বম্ভরপুরের মতো একটি উপজেলার কর্মকর্তা যখন বলেন- তিনি একাই চারটি উপজেলার দায়িত্ব পালন করছেন, তখন সেটি আমাদের আমলাতান্ত্রিক অদক্ষতার প্রকাশ।
প্রকৃতপ্রস্তাবে শুধু ভবন নির্মাণ করে, সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হয় না। সেবা আসে পরিকল্পনা, নিয়োগ, মানবিকতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা থেকে। জনগণ কর দেয়, তাদেরই অর্থে এসব প্রতিষ্ঠান। অথচ সেই জনগণই মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত - এ কেমন রাষ্ট্রচিন্তা?
আমরা চাই, এই অব্যবস্থা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে দ্রুত ব্যবস্থা করা হোক। অবিলম্বে শূন্যপদে জনবল নিয়োগ দিতে হবে, প্রতিটি কেন্দ্রে নির্দিষ্ট সময় অন্তর তদারকি নিশ্চিত করতে হবে, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দায়িত্ব পালনে বাধ্য করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং হাওরাঞ্চলের বিশেষ ভৌগোলিক বিবেচনায় প্রয়োজনীয় প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা মনে করি, সেবা বঞ্চিত মানুষ শুধু ভোটের সময় গণনার উপাদান নয়, তারা এই রাষ্ট্রের সমান নাগরিক। তাদের স্বাস্থ্যসেবার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এখন সময়ের দাবি, নৈতিক দায়িত্ব।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ