সুনামগঞ্জ , শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫ , ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
আলোচনায় জামায়াত, জমিয়ত, এনসিপি, খেলাফত ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরাও ফেব্রুয়ারি ঘিরেই বিএনপি’র প্রস্তুতি ছয়মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৭৭৮ জন দিরাইয়ে দুই পদের বিপরীতে বিএনপির ১৬০ জনের আবেদন ‘মব’ আমাদের সংস্কৃতির অংশ নয় দেড় কোটি টাকার বরাদ্দে নয়ছয় জনগণের স্বার্থবিরোধী বিষয়ে কোনো ছাড় নয় : তারেক রহমান পুকুরে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু জনউদ্যোগের জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন জেলা খেলাফত মজলিসের তরবিয়তী মজলিস অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনার ৬ মাসের কারাদন্ড সীমান্তে চার বাংলাদেশি নাগরিক ও দুই পাচারকারী আটক শান্তিগঞ্জে ৫ দিন ধরে ব্যবসায়ী নিখোঁজ, সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন প্রকাশ্যে চেলা নদীর বালু লুট গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের উদ্যোগে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্প ধোপাজানে থেমে নেই বালু-পাথর লুটপাট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প কাজে আসেনি, শাল্লার পাঁচ গ্রাম অন্ধকারে ছাতকে বালুখেকোদের বিরুদ্ধে অভিযান : ৪টি অবৈধ ড্রেজার বিকল বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ, কনস্টেবল শ্রীঘরে
অর্থ বছর শেষেও সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে সার্জিক্যাল সামগ্রী সরবরাহ হয়নি

দেড় কোটি টাকার বরাদ্দে নয়ছয়

  • আপলোড সময় : ০৪-০৭-২০২৫ ০১:১১:৪০ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৪-০৭-২০২৫ ০১:১৫:৪৮ পূর্বাহ্ন
দেড় কোটি টাকার বরাদ্দে নয়ছয়
বিশেষ প্রতিনিধি ::
অর্থ বছর বছর চলে গেলেও সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে এমএসআর (মেডিকেল এন্ড সার্জিক্যাল রি এজেন্ট) অতি জরুরি পণ্য বুঝে পায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আঁতাত করে হাসপাতালের একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে পণ্য না বুঝেই বিল পরিশোধ করে ভাগাভাগি করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে জরুরি সার্জিক্যাল সামগ্রী হাসপাতালে না থাকায় সাধারণ রোগীরা বাইরে থেকে উচ্চমূল্যে কিনতে হচ্ছে এ সব সামগ্রী। এ সংক্রান্ত তথ্যের জন্য গত এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এমনকি ২০২৪-১০২৫ অর্থ বছরের এমএসআর পণ্য সরবরাহ নিয়ে লুকোচুরি করছে তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়। প্রায় দেড় কোটি টাকার বরাদ্দ সরবরাহ না করেই নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে।

একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে ৩টি আইটেমে দুটি টেন্ডার গত মে মাসের শেষ দিকে আহ্বান করা হয়। মূলত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আঁতাত করে নামকাওয়াস্তে পণ্য বুঝে সমুদয় বরাদ্দ নয়ছয় করতেই টেন্ডার আহ্বান করা হয় বিলম্বে। ৩০ জুন অর্থ বছর শেষ হলেও এখনো ওই পণ্য বুঝে পায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক, স্টোর কিপার ও ওয়ার্ড ইনচার্জও তত্ত্বাবধায়কের অনুমতি ছাড়া এ বিষয়ে কোন কথা বলতে চাননি।
সরেজমিন গত ২৬ জুন সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুবুর রহমানের কক্ষে তাকে পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে অফিসের অন্যদের সঙ্গে কথা বললে তারা এ বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করেন। তত্ত্বাবধায়ককে ফোন করলে সিলেটে আছেন বলে জানান।
গত ২৯ জুন দুপুরে গিয়েও তাকে কক্ষে পাওয়া যায়নি। এসময় সহকারী পরিচালক ডা. সুমন বণিকের কক্ষে গেলে তিনি জানান তত্ত্বাবধায়কের অনুমতি ছাড়া তথ্য দিতে পারবেন না। তবে টেন্ডারের সার্জিক্যাল সব জিনিসপত্র ওইদিন পর্যন্ত বিশেষ করে গজ ব্যান্ডেজ ও সুতা-সুই বুঝে পাননি বলে স্বীকার করেন। গত ১ জুলাই সদর হাসপাতালে গিয়ে এমএসআর টেন্ডারের তথ্য চাইলে তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাওয়ার আহ্বান জানান। ওই সময় তিনি জানান, ৩০ জুন এমএসআর পণ্য সরবরাহের সময়সীমা চলে গেছে। তিনি আরো জানান, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কিছু জিনিস বুঝিয়ে দিয়েছে। তবে গজ, ব্যান্ডেজসহ সুই-সুতো এখনো সরবরাহ হয়নি বলে তিনি স্বীকার করেন। এসব পণ্য পেতে আরো ৬-৭ দিন লাগবে বলেও তিনি জানান। অর্থ বছর চলে যাবার পরও কেন পণ্য সরবরাহ করা হয়নি জানতে চাইলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে অতীতে কোন সাংবাদিক এমন প্রশ্ন করেনি বলে মন্তব্য করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মে মাসে প্রায় দেড় কোটি টাকার এমএসআর টেন্ডাররে কাজ পেয়েছে ‘মেসার্স মক্কা ও মেসার্স মায়ের দোয়া’ নামক দুটি প্রতিষ্ঠান। ওই দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিশে হাসপাতালের একটি সিন্ডিকেট বরাদ্দ লোপাট করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণেই জরুরি সার্জিক্যাল পণ্য অর্থ বছর চলে যাবার পরও সরবরাহ করেনি। বিলম্বে টেন্ডার ও অর্থ বছর চলে যাবার পরও তাই পণ্য না পেয়ে বিল তুলে বরাদ্দ ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয়দের সন্দেহ। শুধু এই টেন্ডারই নয় গত সেপ্টেম্বর মাসেও এমএসআরের দেড় কোটি টাকার আরেকটি টেন্ডারের বেলায়ও এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ আছে। এদিকে জরুরি বিভাগে সার্জিক্যাল সামগ্রী না থাকায় প্রতিদিন রোগীদের বাইরে থেকে উচ্চমূল্যে গজ, ব্যান্ডেজ, সুই-সুতাসহ বিভিন্ন সামগ্রী কিনতে হচ্ছে। সরেজমিন ভুক্তভোগীরা বাইরে থেকে উচ্চমূল্যে সার্জিক্যাল সামগ্রী কিনে ব্যবহার করার চিত্র দেখা গেছে।

গত ১ জুলাই জামালগঞ্জের বাসিন্দা রাসেল আহমদ মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট করে জরুরি বিভাগে আসেন। তাকে সঙ্গে নিয়ে আসা এক কলিগ বাইরে থেকে দ্রুত গজ, ব্যান্ডেজ, সুই-সুতোসহ সব কিছু কিনতে হয়েছে। গত ২৬ জুন জরুরি বিভাগে শহরের ওয়েজখালির সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ফাহাদ এক্সিডেন্ট করে আসলে তাকেও বাইরে থেকে গজ, ব্যান্ডেজ, সুই-সুতা কিনতে হয়েছে। ওইদিন পুরুষ সার্জারি বিভাগের রোগী ইনাতনগর গ্রামের সাহাব উদ্দিন বলেন, সার্জিক্যাল সব কিছু বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনতে হয়েছে। হাসপাতাল থেকে কিছু দেয়নি। একই কথা জানান একই ওয়ার্ডের বাদাঘাটের কাশতাল গ্রামের আবুল বাশার। এভাবে হাসপাতালে সার্জিক্যাল পণ্য না থাকায় রোগিদের বাইরে থেকে সব কিছু কিনতে হচ্ছে।
গত ১১ জুন, ২৬ জুন, ৩০ জুন ও ১ জুলাই সদর হাসপাতালের স্টোর কিপার ও জরুরি বিভাগের ইনচার্জের সঙ্গে কথা বলেও জানা গেছে- গজ, ব্যান্ডেজ ও সুই সুতা তাদের কাছে নেই। উল্লেখ্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে গত ২৬ মে অভিযান চালিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন। অভিযানে স্টোর রুমে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের গড়মিলসহ নানা অনিয়ম ধরা পড়েছিল।
জাসদ নেতা সালেহিন চৌধুরী শুভ বলেন, অর্থ বছর চলে যাবার পরও পণ্য না পেয়ে বিল উত্তোলন করা হয়েছে এটা বিশাল দুর্নীতি। এই টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়েছে বলে আমার সন্দেহ। এ বিষয়ে দুদক তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার আলম বলেন, আমাদের সদর হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা ভেঙে পড়েছে। একটি সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি সাধারণ মানুষ। এরা সাধারণ মানুষের সরকারি বরাদ্দও লুটে নিচ্ছে। এই টেন্ডারের পণ্য সরবরাহ না করে বিল পরিশোধ প্রমাণ করছে কত চরম দুর্নীতি হচ্ছে হাসপাতালটিতে।
সুনামগঞ্জ পৌর বিএনপির সদস্যসচিব মোরশেদ আলম বলেন, স্বৈরাচার আমলের পুরনো সিন্ডিকেটের দখলে সদর হাসপাতাল। তত্ত্বাবধায়কও তাদের নিয়ে দুর্নীতি করছেন। এমএসআর সামগ্রীর অর্থ বছর শেষ হওয়ার পরও সামগ্রী না পাওয়া প্রমাণ করে হাসপাতালে কত বড়ো দুর্নীতি হচ্ছে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ঠিকাদার কিছু সামগ্রী দিয়েছে। আরো কিছু বাকি আছে। আশা করি ৬-৭ দিনের মধ্যে দিয়ে দিবে। এ ক্ষেত্রে কোনও অনিয়ম হয়নি বলে জানান তিনি।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
আলোচনায় জামায়াত, জমিয়ত, এনসিপি, খেলাফত ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরাও

আলোচনায় জামায়াত, জমিয়ত, এনসিপি, খেলাফত ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরাও