সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
“অনেকে নির্বাচনে দেরি করতে চায়, বাধা দিতে চায়, আটকাতে চায়” বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আমরা সরকারকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, নির্বাচনে যত দেরি হবে, বাংলাদেশ তত পিছিয়ে যাবে। বিনিয়োগ আসবে না, চাকরির সুযোগ তৈরি হবে না, জুডিসিয়াল সিস্টেম ভেঙে পড়বে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়বে। সে জন্য দরকার একটা নির্বাচিত সরকার। যেই সরকারের পেছনে রয়েছে জনগণ।
সোমবার দুপুরে সিলেটে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই মন্তব্য করেন। নগরের পাঠানটুলা এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেকের উদ্যোগে শহীদ জিয়াউর রহমানের রুহের মাগফিরাত ও বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় আয়োজিত দোয়া মাহফিলপূর্ব আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন মির্জা ফখরুল। গণতন্ত্রের আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি, নতুন করে সংগ্রাম শুরু করতে হবে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সে জন্য দরকার একটি নির্বাচিত সরকার। যে সরকারের পেছনে মানুষ আছে, জনসমর্থন আছে। নির্বাচিত সরকারের চেয়ে শক্তিশালী কোনো সরকার হতে পারে না। মির্জা ফখরুল বলেন, চব্বিশের আগে ১৫ বছর আমাদের সিলেটের বহু নেতা-কর্মী ভাই গণতন্ত্রের জন্য রাস্তায় রক্ত দিয়েছেন, মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, হাতে পায়ে বেড়ি দিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছে। চব্বিশে আমার ভাই, আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে হাসিনা। আমাদের ভোটের অধিকারের জন্য, গণতন্ত্রের অধিকারের জন্য যারা জীবন দিয়েছেন, তাঁদের শ্রদ্ধা জানাতে সিলেট এসেছি।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এমনি এমনি হঠাৎ করে হাসিনা পালায়নি। বহুদিনের সংগ্রাম, বহু মানুষের ত্যাগ, বহু মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছি। ফ্যাসিবাদমুক্ত হলাম ঠিক আছে, কিন্তু আমরা বলছি লড়াই তো গণতন্ত্রের লড়াই। তিনি বলেন, আমরা একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে মানুষ কথা বলতে পারবে, বাকস্বাধীনতা থাকবে, নারীরা নিরাপত্তা পাবে, তরুণরা কাজের সুযোগ পাবে, মানুষ চিকিৎসার সুযোগ পাবে - এমন একটা দেশ আমরা চাই। সেই দেশ তৈরির জন্য নতুন করে লড়াই শুরু করেছি। আর আমাদের এই সংগ্রামের নেতা হচ্ছেন তারেক রহমান। খালেদা জিয়া এখনো অসুস্থ অবস্থায় আমাদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, হাসিনা গণতন্ত্র, ভোট, পত্রিকা বন্ধ করেছিল। মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করেছিল। সেই অবস্থায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র এনে নতুন সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন। আমরা সেই দল সেই যে দল স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। আমরা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই, কর্মস্থান সৃষ্টি করতে চাই এবং বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্র করতে চাই। সেজন্য বিএনপি ৩১ দফা দিয়েছি। আর এই ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তিনি লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের সময় ঠিক করেছেন, এ জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বলেন, কেউ যাতে আঙুল তুলে কথা না বলতে পারে, আমরা জমি দখল করেছি, চাঁদাবাজি করেছি, জায়গা দখল করেছি। জয় আমাদের সুনিশ্চিত, ইনশাআল্লাহ। নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন। মানুষের কাছে যান। মানুষ যাতে বুঝতে পারে বিএনপি ছাড়া আমাদের কোনও উপায় নেই। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা যখন সুযোগ পাই সিলেট আসি। কারণ হচ্ছে, শত শত বছর আগে এখানে ইসলামের আলো ছড়িয়েছে। সত্য, সুন্দর ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.)। তাদের দরগায় আমরা আসি। আমি নয়, আমরা নয়, সারা দেশ-বিদেশের হাজার হাজার মানুষ এখানে আসেন। কারণ তারা এই মহান পুরুষরা যারা অন্ধকারকে আলোকিত করার জন্য মানুষকে আলোকপাত করেছিলেন, সেই মানুষগুলোকে শ্রদ্ধা জানাতে চান। তিনি আরও বলেন, এটা আমাদের পুণ্যভূমি। সিলেট আমাদের কাছে আরো প্রিয় আরেকটা কারণ আছে তাহলো আমাদের নেতা তারেক রহমানের শ্বশুর বাড়ি। সেজন্য আমরা এখানে আসতে আনন্দ পাই, শান্তি পাই।
এ সময় তিনি বলেন, সিলেটের যেখানে বেগম জিয়া সমাবেশ করেছিলেন সেখানে এবার তারেক রহমানকে নিয়ে দেখা হবে। এর আগে বক্তব্যের শুরুতে মির্জা ফখরুল সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, এম ইলিয়াস আলীসহ সব গুম হওয়া নেতাদের কথা স্মরণ করেন।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির সাধারণ স¤পাদক ইমদাত হোসেন চৌধুরী, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইশতিয়াক আহমদ। দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ড. এনামুল হক চৌধুরী, খন্দকার আব্দুল মোক্তাদির, মাহিদুর রহমান, আরিফুল হক চৌধুরী, ডা. শাখাওয়াত হোসেন জীবন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক স¤পাদক জি কে গৌছ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এ সালাম, বিএনপির কেন্দ্রীয়সহ সাংগঠনিক স¤পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, মিফতা সিদ্দিকী, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ক্ষুদ্র ঋণবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল রাজ্জাক, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী, ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, আবুল কাহের শামীম, মিজানুর রহমান মিজান, হাদিয়া চৌধুরী মুন্নি, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী প্রমুখ।
পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠান দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। এর আগে সিলেটে পৌঁছে সকালে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
এ সময় আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের আয়োজন করবে - এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন ফখরুল।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
সিলেটে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
নির্বাচন দেরি হলে জুডিসিয়াল-আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে
- আপলোড সময় : ০৮-০৭-২০২৫ ১২:৩০:৫৭ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৮-০৭-২০২৫ ১২:৪১:১০ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ