মোহাম্মদ নূর ::
সুনামগঞ্জ শহরের রায়পাড়ায় ঘরভাড়া পরিশোধে মাত্র তিন দিন দেরী হওয়ায় ভাড়াটিয়া পরিবারকে ঘরের ভেতর রেখে বাইরে তালা লাগিয়ে দেন বাড়ির মালিক। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে।
স্থানীয়দের সহায়তায় খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তালা খুলে উদ্ধার করে ঘরের ভেতরে আটকে পড়া পরিবারটিকে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। ভুক্তভোগী ভাড়াটিয়া ইমন বর্মণ জানান, বাসা ভাড়ার মাস পেরিয়ে তিন দিন অতিক্রম হলে বাসার মালিক আমি, আমার অসুস্থ মা, স্ত্রীসহ পরিবারের সবাইকে ঘরের ভিতরে রেখেই তালা লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে আশপাশের মানুষদের আমি জানালা দিয়ে ডাকতে শুরু করি। পরে তারা এসে আমাদের এই অবস্থা দেখে পুলিশকে খবর দেয় এবং কয়েক ঘণ্টা তালাবদ্ধ ঘরে থাকার পর আমাদের পুলিশ উদ্ধার করে। ইমন বর্মণ আরও জানান, তিনি ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ইউসুফ চৌধুরীর বাড়ির একটি কক্ষ মাসিক ৬ হাজার ২০০ টাকায় ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। প্রতিমাসে ৫ তারিখের মধ্যে ভাড়া পরিশোধের নিয়ম থাকলেও চলতি মাসে আর্থিক সমস্যার কারণে ৮ তারিখেও ভাড়া পরিশোধ করতে পারেননি।
মঙ্গলবার সকালে বাড়ির মালিক এসে দরজায় তালা লাগিয়ে চলে যান। তালাবদ্ধ ঘরে ইমনের স্ত্রী, মা জবা বর্মণসহ অন্তত ৬ জন আটকা পড়েন। দুই দিন আগে রান্নাঘরের গ্যাস সংযোগও বন্ধ করে দেন ইউসুফ চৌধুরী। ইমনের মা জবা বর্মণ বলেন, ভাড়ার টাকা মঙ্গলবারই দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ১ হাজার টাকা কম থাকায় মালিক টাকা নেননি। উল্টো গালাগালি করে আমাদের ভেতরে রেখে দরজায় তালা মেরে দেন। স্থানীয়রা জানান, চার বছর ধরে ওই বাসায় পরিবারের ৬ সদস্য নিয়ে বসবাস করে আসছেন ইমন বর্মণ। তিনি পেশায় একজন ঝালমুড়ি বিক্রেতা। বর্তমানে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। বাসা ভাড়া নেয়ার পর থেকে নিয়মিত মাসিক ভাড়া পরিশোধ করে আসলেও আর্থিক সমস্যার কারণে জুন মাসের ভাড়া পরিশোধ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। ভাড়া পরিশোধে ৩ দিন দেরি হওয়ায় মা ও ছেলের সাথে অশোভন আচরণ করেন বাড়ির মালিক ইউসুফ চৌধুরী এবং তাদের তালাবদ্ধ করে রাখেন। ভাড়া না দেয়া পর্যন্ত ভাড়াটিয়া পরিবারটিকে আটকে থাকার কথা বলে চলে যান ইউসুফ চৌধুরী। এ ব্যাপারে প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম বলেন, এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। আমরা তার ধিক্কার জানাই। সামান্য টাকার জন্য মানুষ এতোটা নিচে নামতে পারে কিভাবে? ঘরে আটকে থাকা তাদের যদি কোন ধরনের অঘটন ঘটে যেত তাহলে এর দায়ভার কে নিতো?
পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়া স্বপন চন্দ্র বলেন, ঘরে আটকে থাকাদের চেচামেচি শুনে আমরা এসে দেখি বাইরে তালা লাগানো। মানুষের সমস্যা হতেই পারে, মাত্র তিন দিন হয়েছে মাস পেরিয়েছে। এর জন্য এইরকম আচরণ আমরা মেনে নিতে পারছি না। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ ব্যাপারে বাসার মালিক ইউসুফ চৌধুরী বলেন, সময় মতো গ্যাস বিলের টাকা পরিশোধ করতে হয় আমার। এছাড়াও তাদেরকে আমি এক বছর আগে নোটিশ দিয়েছি, এখনও আমার বাসা ছেড়ে যাচ্ছে না।
সদর মডেল থানার এসআই জুলহাস বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমরা গিয়ে তালা খোলার ব্যবস্থা করি। উভয়পক্ষের আলোচনায় বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে। কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি।
সুনামগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ির মালিকের কাছ থেকে চাবি এনে তালা খুলে পরিবারটিকে উদ্ধার করা হয়েছে।
বিষয়টি মানবিক দিক বিবেচনায় গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
বাড়িওয়ালার অমানবিক কান্ড
ভাড়া দিতে ৩ দিন দেরি হওয়ায় ভাড়াটিয়াকে ঘরে রেখে তালা
- আপলোড সময় : ০৯-০৭-২০২৫ ১২:৩০:১৪ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৯-০৭-২০২৫ ১২:৩১:৩৬ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ