ভাড়াটিয়াকে ঘরে রেখে তালা : বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিন
- আপলোড সময় : ১০-০৭-২০২৫ ১২:৪৯:৫৯ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১০-০৭-২০২৫ ১২:৪৯:৫৯ পূর্বাহ্ন

সাম্প্রতিক এক ঘটনা আমাদের সমাজের কিছু বেদনাদায়ক বাস্তবতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সুনামগঞ্জ শহরের রায়পাড়ায় মাত্র তিন দিন ঘরভাড়ার বিলম্বে একটি অসহায় পরিবারকে ঘরের ভেতরে রেখে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেন বাড়ির মালিক ইউসুফ চৌধুরী। এই অমানবিক ঘটনায় নৈতিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
ভুক্তভোগী ইমন বর্মণ একজন দিনমজুর, পেশায় ঝালমুড়ি বিক্রেতা এবং বর্তমানে একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী। অসুস্থ মা, স্ত্রী ও শিশু সন্তানসহ ছয়জনের পরিবার নিয়ে তিনি গত চার বছর ধরে ওই বাসায় বসবাস করছেন। নিয়মিত ভাড়া পরিশোধের পরও শুধুমাত্র আর্থিক সংকটে জুন মাসের ভাড়া ৮ তারিখ পর্যন্ত পরিশোধ করতে না পারায়, তাকে ও তার পরিবারকে ঘরের ভিতরে তালাবদ্ধ করে রাখার মতো নিষ্ঠুর আচরণ করেছে বাড়ির মালিক।
এ ধরনের ঘটনা শুধু আইন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন নয়, এটি সমাজের বিবেক ও সংবেদনশীলতার ওপর এক নির্মম আঘাত। আর্থিক টানাপোড়েনে থাকা কোনো পরিবারকে সাহায্য না করতে পারা যতটা দুঃখজনক, তার চেয়েও লজ্জাজনক তাদের ওপর এমন অমানবিক দমন-পীড়ন চালানো।
বাসার মালিকের ভাষ্য- তিনি গ্যাস বিল সময়মতো দিতে পারেন না এবং পরিবারটিকে আগে থেকেই বাসা ছাড়ার নোটিশ দিয়েছিলেন - এই ব্যাখ্যাও কোনোভাবেই তালাবদ্ধ করে রাখার বৈধতা দেয় না। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনেও এ ধরনের ‘আটকে রাখা’ স্পষ্টভাবে বেআইনি এবং অপরাধ হিসেবে গণ্য।
অন্যদিকে পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ এবং স্থানীয়দের মানবিক সহযোগিতা এই ঘটনায় আশার আলো দেখায়। তবে ‘লিখিত অভিযোগ না আসা পর্যন্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে না’ এই অবস্থান একধরনের নির্লিপ্ততা, যা ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তির পথ খুলে দিতে পারে।
আমরা মনে করি, সমাজে বসবাসের জন্য যেমন বাড়িওয়ালার অধিকার রয়েছে, তেমনি ভাড়াটিয়ারও রয়েছে মর্যাদাপূর্ণ ও মানবিক আচরণ পাওয়ার অধিকার। সামান্য টাকার জন্য কাউকে গৃহবন্দী করে রাখার মতো ঘটনা যেন আর কখনো না ঘটে, তার জন্য প্রয়োজন নৈতিক সচেতনতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং প্রশাসনের জোরালো ভূমিকা।
এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বেআইনি আটক রাখার অভিযোগে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক - এটাই সময়ের দাবি। একইসাথে প্রয়োজন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ভাড়াটিয়া সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের জোরদার প্রয়াস।
এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার হবো না কেন? আজ যদি প্রতিবাদ না করি, আগামীকাল এই নির্মমতার শিকার হতে পারি আমরা কেউ, আমাদের স্বজন কিংবা সমাজের অন্য কোনো অসহায় মানুষ।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ