জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া ::
এক সময়ের সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এখন চরম শিক্ষক সংকটে ভুগছে। ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর বিপরীতে বর্তমানে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র দুইজন। নেই প্রধান শিক্ষক, বাংলা, ইংরেজি, গণিত, ইসলাম শিক্ষা, কৃষি ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক।
বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। হাওর ঘেরা তাহিরপুর উপজেলার একমাত্র সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৭ সালে জাতীয়করণ হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় শিক্ষক সংকট, যা তিন যুগ পেরিয়েও কাটেনি। বর্তমানে ১১টি শিক্ষক পদের বিপরীতে কর্মরত মাত্র ৩ জন।
সম্প্রতি শিক্ষক রূপেশ দাশ বদলি হয়েছেন, আরেক শিক্ষক তপু বিশ্বাস চলতি মাস শেষে ব্যাংকে যোগ দিতে বিদ্যালয় ছাড়ছেন। ফলে পাঠদান কার্যক্রম কার্যত ভেঙে পড়েছে। বর্তমানে ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন ও সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষক এএইচএম লিয়াকত - মাত্র এই দুই শিক্ষক বিদ্যালয়ের ৬০০ শিক্ষার্থীর পাঠদানে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে জীববিজ্ঞানের শিক্ষক প্রশিক্ষণে থাকায় তিনিও অনুপস্থিত।
শুধু শিক্ষক নয়, প্রশাসনিক জনবল সংকটও প্রকট। প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য, সহকারী প্রধান শিক্ষক ফয়জুল হুসাইন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নেই অফিস সহকারী, দুইটি অফিস সহায়ক পদের মধ্যে একটি শূন্য। বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী সামরুল ইসলাম ও শ্যামল বর্মণ বলেন, ১১ জন শিক্ষকের স্থলে মাত্র ৩ জন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয় চালানো অসম্ভব। এই অবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম বলে কিছুই অবশিষ্ট নেই। অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত পাঠদান না হওয়ায় সিলেবাস অসম্পূর্ণ থাকে এবং ফলাফল খারাপ হচ্ছে।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অর্ণব পুরকায়স্থ ও লুইপা বেগম বলেন, শিক্ষক না থাকায় প্রতিদিনই ক্লাস বাতিল হয়। সিলেবাস শেষ করতে পারি না, ফলাফল খারাপ হয়।
ষষ্ঠ শ্রেণির জান্নাতুল ফেরদৌস রশ্মিও একই অভিযোগ করেন।
ভৌত বিজ্ঞানের সিনিয়র শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন জানান, শিক্ষক সংকটের কারণে বিদ্যালয়টির প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ ও কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ফয়জুল হুসাইন জানান, শিক্ষক সংকটসহ প্রতিষ্ঠানটির জনবল সংকটের বিষয়ে বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হলেও কোনো সমাধান হয়নি। মোট ১১ শিক্ষকের পদ রয়েছে। এর গত চার মাসের মধ্যে তিনজন বদলি, চলতি মাসে আরও একজন ব্যাংকে চাকরি পেয়েছেন, তিনিও চলে যাবেন। ফলে ৬ শতাধিক শিক্ষার্থীর এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রমে চরমভাবে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য গুরুত্ব সহকারে পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
সুনামগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। শিক্ষক সংকটের বিষয়ে কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। এ বিষয়ে সিলেট আঞ্চলিক উপ-পরিচালক এ কে এম আব্দুল্লাহ জানান, তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের বিষয় অবগত আছি। আমি বার বার শিক্ষক সংকট এর বিষয়ে বলি কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। আর বদলি করে মাউশি, আমার কিছুই করার থাকে না। তবে বদলি করার সময় কোন স্কুলে কতজন শিক্ষক আছে তা দেখে বদলি করলে এভাবে সংকট তৈরি হতো না।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ৬ শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র দুই শিক্ষক!
- আপলোড সময় : ১০-০৭-২০২৫ ১২:৫৩:৩১ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১০-০৭-২০২৫ ০৮:৪৩:৪৭ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ