পাঁচ মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ৯১০০ মামলা
- আপলোড সময় : ২০-০৭-২০২৫ ১০:৫৬:০৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২০-০৭-২০২৫ ১০:৫৬:০৬ অপরাহ্ন

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
দেশের থানাগুলোতে ৫ মাস ধরে প্রতি মাসে ১ হাজার ৮০০-এর বেশি নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে। সেই হিসাবে দিনে ৬০টি এবং প্রতি ২৪ মিনিটে একটি মামলা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতনের অনেক ঘটনায়ই মামলা হয় না - এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিলে অপরাধের প্রকৃত মাত্রা স¤পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।
পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ৯ হাজার ১০০ নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী অপরাধগুলোর বড় অংশই ঘটেছে বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে।
নারী ও শিশুদের ওপর অব্যাহত নির্যাতন, হয়রানির ঘটনার মধ্যে সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি আলোচিত ঘটনা ঘটেছে। ১৬ জুলাই বগুড়ায় বখাটে যুবকের ছুরিতে গুরুতর আহত হয় এক স্কুলছাত্রী এবং নিহত হন তার ভাবি ও দাদি। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় ২৭ জুন গণধর্ষণের শিকার হয় ত্রিপুরা নৃগোষ্ঠীর ১৪ বছরের এক স্কুলছাত্রী। জুনের শেষ দিকে কুমিল্লার মুরাদনগরে এবং ভোলার তজুমদ্দিনে দুই নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়। মুরাদনগরের ঘটনায় ধর্ষণের শিকার নারীকে মারধর করে তাঁর বিবস্ত্র অবস্থার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। মিডিয়ায় সম্প্রতি নারী ও শিশুদের ওপর এ রকম বিভিন্ন মাত্রার নির্যাতন; এমনকি হত্যার অনেক খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যানটি গত মে মাস পর্যন্ত।
পুলিশ কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, গত মার্চ, এপ্রিল ও মে - এই তিন মাসে অপরাধের ঘটনার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। মে মাসে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮৭টি মামলা হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ৯ হাজার ১০০ নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে।
আইন অনুযায়ী ধর্ষণ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি, পারিবারিক সহিংসতা, গৃহকর্মী নির্যাতন, শিশু নিপীড়ন, বাল্যবিবাহ ও হত্যার মতো গুরুতর অপরাধগুলো নারী ও শিশু নির্যাতনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত।
পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ বিষয়ে বলেন, পুলিশ প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে থানাগুলোকে আরও দায়িত্বশীল করে গড়ে তোলা হচ্ছে। নারী ও শিশুসহায়তা ডেস্কগুলোকে আরও সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নারী অধিকারকর্মীদের মতে, পুলিশের পরিসংখ্যান বাস্তব ঘটনার পুরো প্রতিফলন নয়। তাঁরা বলছেন, অনেক নারী ও শিশু সামাজিক চাপ, ভয় কিংবা প্রভাবশালী মহলের ক্ষমতার কারণে থানায় অভিযোগ জানাতেই পারেন না। অনেক ঘটনায়ই মামলা হয় না।
মানবাধিকার সংগঠন ‘আমরাই পারি’ জোটের প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক বলেন, যেসব ঘটনা মামলা পর্যন্ত গড়ায়নি, সেগুলোর সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের হাতে নেই। তবে এটা নিশ্চিত, প্রকৃত নির্যাতনের চিত্র আরও ভয়াবহ।
জিনাত আরা হক আরও বলেন, অপরাধীদের দ্রুত বিচার এবং ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে ঘটনার সংখ্যা কমবে না।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা কমাতে হলে শুধু আইন প্রয়োগ নয়; সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো, সচেতনতা বাড়ানো এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। - আজকের পত্রিকা
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ