মোহাম্মদ নূর ::
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন জলমহালে চলেছে ‘লুটের মহোৎসব’। শুধু দলীয় বিবেচনায় নয়; কয়েক গ্রামের মানুষ ঘোষণা দিয়ে জবরদস্তিমূলকভাবে সরকারের ইজারাকৃত জলমহালে নেমে মাছ তুলে নিয়ে যায়। অনেক জলমহালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গিয়েও কিছু রক্ষা করতে পারেনি। ভুক্তভোগী ইজারাদাররা বিল পারে দাঁড়িয়ে কোটি কোটি টাকার মাছ লুট হতে দেখলেও হাজার হাজার মানুষের ‘মবের’ সামনে তাদের কিছুই করার ছিল না। এবারও সেই লুটপাটের পাঁয়তারা চলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। এমন পরিস্থিতির যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য দিরাই-শাল্লার বিভিন্ন মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ বিষয়ে বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুরে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন তারা। আবেদন প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন মৎস্যজীবী মো. নজরুল ইসলাম, মহেন্দ্র চন্দ্র দাস, প্রাণেশ বিশ্বাস, রাজেশ দাস, প্রজেশ লাল দাস, বিকাশ রঞ্জন দাস, সুদীপ চন্দ্র দাস, সাদিকুর রহমান তালুকদার প্রমুখ। আবেদনে তারা উল্লেখ করেন, বিগত ২/৩ বৎসর যাবৎ শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের কিছু লোক ১০/১৫টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে সরকারের ইজারাকৃত জলমহালসমূহে (বিশেষ করে কালিয়া গোটা হাওরে) পাহারাদারদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পাইল বিলের মাছ লুট করে একটি সংঘবদ্ধ লুটেরা দল। তারা সরকারের ইজারাকৃত জলমহালে মাছ লুটপাট করে মৎস্যজীবী সমিতির ক্ষতি সাধন করে আসছে। এছাড়া অবৈধ কোণা জাল দিয়ে পোনা মাছ ধরে মৎস্য স¤পদের ক্ষতি করছে। সরকার কর্তৃক ইজারাকৃত জলমহালে অবৈধভাবে মাছ ধরার ফলে দিরাই-শাল্লা উপজেলার মৎস্যজীবী সমিতির গরিব সদস্যদের ক্ষতি হচ্ছে। এই ধরনের লুটপাটের কারণে মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্যগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়া কোণা জাল দিয়ে নির্বিচারে অবৈধভাবে পোনা মাছ ধরার কারণে মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় অনেক মৎস্যজীবী সমিতি সরকারের পাওনা জলমহালের খাজনা পরিশোধে আগ্রহ বা ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে জলমহাল হতে সরকারের রাজস্ব পাওয়া কঠিন হবে। আবেদনে মৎস্যজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ আরও উল্লেখ করেন, ১৪৩১ বাংলা সনের বর্ষা মৌসুমে দিরাই-শাল্লার অনেক জলমহালে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে যার ফলে অনেক মৎস্যজীবী সমিতির কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে গেছে। খাজনা দেওয়াসহ বিল পরিচর্যায় সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে তারা। মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারিগণ জানান, বর্তমানে লুটেরাচক্রটি জলমহালের আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের কিছু লোককে তাদের দলভুক্ত করে শক্তি বৃদ্ধি করছে। অবৈধ কোণা জাল দিয়ে মাছ ধরা ও ইজারাপ্রাপ্ত জলমহালে মাছ লুটপাটের পাঁয়তারা বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে গরিব মৎস্যজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একই সাথে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। লুটেরাদের হাত হতে গরিব মৎস্যজীবী সমিতির সদস্যদের রক্ষা করতে তারা প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান। এ ব্যাপারে মৎস্যজীবীদের আশ্বস্ত করে জেলা প্রশাসক ড. মেহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, জলমহাল লুটপাট ও অবৈধ কোণা জাল দিয়ে মাছ নিধন রোধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
জলমহাল লুট ঠেকাতে প্রশাসনের দ্বারে মৎস্যজীবীরা
- আপলোড সময় : ২৪-০৭-২০২৫ ০৭:৫০:৩৯ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৪-০৭-২০২৫ ০৭:৫১:০৯ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ