মাইলস্টোনের বাতাসে পোড়াগন্ধ
- আপলোড সময় : ২৪-০৭-২০২৫ ০৭:৫৯:২৮ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৪-০৭-২০২৫ ০৭:৫৯:২৮ পূর্বাহ্ন

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে নেই চিরচেনা পরিবেশ। সাজানো-গোছানো ক্যা¤পাস এখন ছিন্ন-ভিন্ন। বুধবার (২৩ জুলাই) তৃতীয় দিনেও আশপাশের বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে পোড়া গন্ধ। আচমকা বিমান দুর্ঘটনায় ঝরেছে তাজা প্রাণ। সবকিছু এলোমেলো স্বনামধন্য এ প্রতিষ্ঠানটির। নেই কোনও কোলাহল হই হুল্লোড়। ঘটনার দুই দিন পর দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে সব ক্লাস।
প্রধান ফটক বন্ধ থাকলেও বাইরে উৎসুক জনতার ভিড়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ের পরিধি বাড়ছে। বুধবার (২৩ জুলাই) বেলা ১১টায় প্রতিষ্ঠানটির স্কুল শাখায় গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র।
নিরাপত্তার কারণে ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ি। তবে পূর্ব পাশে বিমান বিধ্বস্তের স্থানটির একাংশ বাইরে থেকে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন জনতা। অনেকে ছবি তুলছেন ও ভিডিও করছেন। সেদিকটায় মানুষ, চেয়ার টেবিল ও আসবাবপত্র পোড়ার উৎকট গন্ধ ভেসে আসছে। গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। তবে নিরাপত্তার কাজ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি তৎপরতা নেই। আর প্রত্যক্ষদর্শী দুই- একজন ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন।
ভেতরে প্রবেশের আকুতি :
মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে বিমান বিধ্বন্তের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৩১ জন। আর হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন কেউ কেউ। গোটা জাতি স্তম্ভিত। তাদের ব্যথায় ব্যথিত হয়ে অনেকেই ছুটে আসছেন ঘটনাস্থল দেখতে। সবার আকুতি একবার ভেতরে যাওয়ার। অনেকে দেয়াল টপকে যেতে চান। তবে বাধ্যবাধকতার জন্য তাদেরকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সবার চোখে মুখে বেদনার অশ্রু। কথা বলতে গিয়ে ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠেন একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক।
পোড়াগন্ধে বেদনাবিধূর পরিবেশ :
মাইলস্টোনের বিধ্বস্ত কক্ষটি ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। দোতলার ভেতরে চেয়ার-টেবিলগুলো দুমড়েমুচড়ে গেছে। আর নিচতলার শ্রেণিকক্ষের ধ্বংসলীলা যেন যুদ্ধ ক্ষেত্রের প্রতিচ্ছবি। গভীর থেকে মাটিগুলো আচরে উঠে কর্দমাক্ত হয়ে গেছে। এরইমধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কাঠ ও জানালার কাঁচগুলো। সেখান থেকে এক ধরনের উৎকট গন্ধ অনুভূত হচ্ছে। এক নজর দেখার জন্য পাশের পরিত্যক্ত ভবনের দোতলায় উঠছেন অনেকেই। এ দৃশ্যকে অনেকেই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না। সবার চোখে মুখে যেন বেদনার অশ্রু।
সেখানে আসা অন্য একটি স্কুলের অভিভাবক ফাহিমা আক্তার বলেন, আমারও দুই সন্তান স্কুলে পড়ে। মাইলস্টোনের সোনামনিদের প্রাণহানির বিষয়টি শোনার পর থেকেই চোখের সামনে সেই চেহারাগুলো ভেসে আসছে। গত দুই রাত ঠিক মতো ঘুমাতে পারিনি। তাই এখানে চলে এসেছি।
আতিয়ার বেঁচে যাওয়া... :
সেখানে এসেছিলেন সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মাইলস্টোন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আতিয়া ফাইরুজ আনিয়া। সে জানায়, সেদিনের ঘটনার ৩০ মিনিট আগেও সাড়ে ১২টায় সে শিশুদের ক্লাসে গিয়েছিল। তবে সে তার নিজের ক্লাসরুমে ফিরে যাওয়ার পরপরই বিকট শব্দ শুনতে পায়। আনিয়া জানায়, সে প্রথমে মনে করেছিল- কোনও বোমা ফুটেছে। এর কিছুক্ষণ পরই দেখতে পায়, বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। তখন ছিন্ন ভিন্ন দেহ দেখে সে নিজেকে স্থির রাখতে পারেনি। তার মতে, আর ৩০ মিনিট আগে হলে তার পরিণতিও এমন হতে পারতো।
আহত সন্তানকে রেখেই মাইলস্টোনে বাবা-মা :
মাইলস্টোনের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আহসান হাবীব। সেদিন ক্লাসে থাকলেও একই প্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণিতে পড়–য়া বড় বোন নাফিসা তাবাসসুম অনন্যার কাছে যায় ঘটনার ২০ মিনিট আগে। সৌভাগ্যক্রমে সে বেঁচে যায়। তবে হুড়োহুড়ি করে বের হওয়ার সময় সে হাতে সামান্য ব্যথা পায়। সেই সন্তানকে বোনের কাছে রেখেই মাইলস্টোন ক্যা¤পাসে এসেছেন আহসান হাবীবের বাবা মজিবুল হক ও ফারিয়া সরকার। তারা বলেন, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও ছেলের চিকিৎসার কারণে মঙ্গলবার আসতে পারিনি। তাই আজ আসলাম। নিজের ছেলে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও তার সহপাঠীদের মর্মান্তিক মৃত্যু তাদের পীড়া দিচ্ছে বলে জানান।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ