উপেক্ষিত বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবি
স্বল্প বেতনে গ্রামপুলিশের মানবেতর জীবন
- আপলোড সময় : ১১-০৮-২০২৫ ০৯:১৫:১৩ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১১-০৮-২০২৫ ০৯:১৫:১৩ পূর্বাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ::
“দিন-রাত মানুষের নিরাপত্তা দিই, কিন্তু নিজের সংসারটা নিরাপদ রাখতে পারি না” - এমন হৃদয়স্পর্শী কথা বললেন সুনামগঞ্জের এক গ্রাম পুলিশ সদস্য। অতি স্বল্প বেতনে কঠোর দায়িত্ব পালন করে আসা গ্রাম পুলিশ সদস্যরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
রবিবার সকালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বাংলাদেশ গ্রামপুলিশ বাহিনী এসোসিয়েশন, সদর উপজেলা শাখার উদ্যোগে বেতনভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সহ-সভাপতি মো. আহমদ আলী এবং পরিচালনা করেন সাধারণ স¤পাদক মো. রফিকুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন গ্রামপুলিশ সদস্য মো. আক্কাছ আলী, জগদীশ, ছিদ্দেক মিয়া, মো. আবুল হোসেন, শুভ্র দাস, গীতারানী দাস, অর্চনা রানী দাস প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি বেতন-ভাতা বাড়ানো হোক, আমাদের জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনেন না। অল্প বেতনে সংসার চালানো সম্ভব হয় না, সন্তানদের পড়ালেখা করানোও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, বছরের পর বছর আমরা বেতন-ভাতা বৃদ্ধি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু আমাদের দাবি-দাওয়া বারবারই উপেক্ষিত। আমরা স্বল্পবেতনে চাকুরী করে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করে আমরা যে বেতন ভাতা পাই তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে না। আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পারে না। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মহোদয়ের কাছে আমাদের দাবি- আমাদেরকে জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। ১৯তম ও ২০তম গ্রেডে উন্নীত করা হোক।
রঙ্গারচর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ মো. আক্কাছ আলী বলেন, আমরা গ্রামে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করি, রাত জেগে পাহারা দিই, ঝড়-বৃষ্টিতেও দায়িত্বে থাকি। অথচ মাস শেষে যে বেতন পাই, তা দিয়ে নুন-ভাতের যোগাড়ই কষ্টকর।
কাঠইর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ সদস্য জগদীশ ও মহিলা সদস্য গীতারানী দাস জানান, দায়িত্ব পালনে অনেক সময় নিজের পকেটের টাকা খরচ হয়, তবুও কেউ আমাদের কষ্টের খবর রাখে না।
ভাতা বাড়িয়ে সম্প্রতি
প্রসঙ্গত, গ্রাম পুলিশ বাহিনীর (দফাদার ও মহল্লাদার) বেতন এক হাজার টাকা এবং অবসরকালীন বা মৃত্যুকালীন (আনুতোষিক) ভাতা ২০ হাজার টাকা বাড়ানো হয়। জানাযায়, গত ২০ মে অর্থ বিভাগ ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে জানিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে সকল জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ বাহিনীর দফাদারদের বেতন-ভাতা ৭ হাজার টাকার পরিবর্তে ৮ হাজার টাকা ও মহল্লাদারদের বেতনভাতা ৬ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৭ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া দফাদারদের অবসরকালীন বা মৃত্যুকালীন (আনুতোষিক) ভাতা ৬০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৮০ হাজার টাকা ও মহল্লাদারদের ৫০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৭০ হাজার টাকা (সরকারি এবং ইউনিয়ন পরিষদ অংশে ৫০:৫০ হারে) করা হলো।
অর্থ বিভাগের বেতন-ভাতা ও অবসরকালীন বা মৃত্যুকালীন (আনুতোষিক) ভাতা বাড়ানো সংক্রান্ত পত্রের আলোকে চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) গ্রাম পুলিশ বাহিনীর (দফাদার ও মহল্লাদার) বেতন এবং অবসরকালীন/মৃত্যুকালীন (আনুতোষিক) ভাতার সরকারি অংশের চাহিদা পাঠানোর জন্য এবং ইউপি অংশ ইউনিয়ন পরিষদের আয় থেকে বর্তমানে প্রচলিত নিয়মে দেওয়ার কার্যক্রম গ্রহণের জন্য ডিসিদের অনুরোধ জানায় স্থানীয় সরকার বিভাগ। তবে এই বেতনে গ্রাম পুলিশদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা। গ্রাম পুলিশরা জাতীয় বেতন স্কেলের ১৯তম ও ২০তম গ্রেডে তাদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ