বিশ্বজিত রায় ::
রোপা আমন লাগানোর শেষ পর্যায়ে এসেও ব্যস্ত সময় পার করছেন সুনামগঞ্জের আমন চাষীরা। মাত্রাতিরিক্ত পানি কিংবা অতিবৃষ্টি না থাকায় আমনের বীজতলা প্রস্তুত ও রোপণে কৃষককে তেমন বেগ পেতে হয়নি।
শেষ পর্যন্ত প্রকৃতির সুবিধা বজায় থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অধিক ফলনের আশা স্থানীয় কৃষক ও কৃষি অধিদপ্তরের। সুনামগঞ্জের হাওরে উৎপাদনের দিক থেকে বোরোর পরেই আমনের অবস্থান। দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণে বোরোর পাশাপাশি আমনেরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জেলায় ইতিমধ্যে প্রায় ৮৫ ভাগ আমন লাগানো শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার অনেক জায়গায় গিয়ে আমন চাষীদের চারা উৎপাটন, রোপণ, সার-কীটনাশক প্রয়োগ এবং ক্ষেতের পরিচর্যা করতে দেখা গেছে। প্রকৃতি সদয় থাকায় চাষাবাদ নির্বিঘ্নে শেষ করার স্বস্তিও প্রকাশ করেন কেউ কেউ। তবে প্রণোদনার সার-বীজে অসন্তুষ্টি আছে কৃষকের। যদিও কৃষি অধিদপ্তরের দাবি, এ বছর সাড়ে চৌদ্দ হাজারেরও বেশি কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের লালপুর গুচ্ছগ্রামের উত্তম দাস দুই কানি (দুই কিয়ার) জমি আবাদ করেছেন। বীজতলায় চারা তুলতে তুলতে তিনি বলেন, ‘প্রকৃতি যে রকম আছে শেষমেষ এই রকম থাকলে কিয়ার (৩০ শতকে এক কিয়ার) প্রতি ১৮ থেকে ২০ মণ ধান হবে।’ এই জমি চাষাবাদ করতে সরকারি কোন প্রণোদনা পাননি বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ ইউনিয়নের গোবিন্দনগর গ্রামের প্রদীপ চন্দ্র দাস বলেন, প্রকৃতি ও পরিবেশ ভালো থাকায় আমন লাগাতে সমস্যা হয়নি। জমিতে এ বছর পোকা-মাকড়ের উপদ্রপও কম। প্রায় চৌদ্দ কিয়ার জমি আবাদ করতে গিয়ে প্রণোদনার সার-বীজ কোন কিছুই পাইনি আমরা।
আমন ক্ষেতে সার প্রয়োগ করছিলেন পলাশ গ্রামের চঞ্চল দাস। কাজের ফাঁকে তিনি বলেন, এ বছর ১০ কিয়ার জমি আবাদ করেছি। প্রতি কিয়ারে খরচ হবে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। কৃষি প্রণোদনা ছাড়া নিজের খরচেই আমন চাষ করেছি। প্রকৃতির এই রেশ বজায় থাকলে ফলনের আশা পূর্ণ হবে আমাদের।
জামালগঞ্জের ভীমখালী ইউনিয়নের ছোট ঘাগটিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মন্নান তালুকদার বলেন, হাওরে এ বছর আমন উপযোগী পরিবেশ বিরাজ করছে। সময়ে সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় কীটপতঙ্গের উপদ্রপও কম। আশা করি আমনের বাম্পার ফলন হবে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলায় এ বছর ৮৩ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২ লাখ ১৬ হাজার ৯৯৭ মেট্রিক টন চাল। উৎপাদিত চালের বাজার মূল্য ১০ কোটি ৬৩ লাখ ২৮ হাজার ৫৩০ টাকা। জেলার সবচেয়ে বেশি রোপা আমন চাষ হয়েছে দোয়ারাবাজার উপজেলায়। সেখানে চাষকৃত জমির পরিমাণ ১৪ হাজার ৬২৫ হেক্টর। মঙ্গলবার পর্যন্ত ৮৫ ভাগেরও বেশি আমন লাগানো শেষ হয়েছে। ১৪ হাজার ৭০০ কৃষককে ৫ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি করে এমওপি সারা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি অধিদপ্তর।
প্রকৃতি-পরিবেশ অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা বলছেন সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ওমর ফারুক।
তিনি বলেন, প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে ১৪ হাজার ৭০০ জনকে। এর চেয়ে কৃষক তিন-চার গুণ বেশি। তাই অনেককে প্রণোদনার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। আমরা আমন চাষীদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছি। কৃষকদের সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগে উদ্বুদ্ধ করছি। পোকা-মাকড় দমনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
আমনে প্রকৃতির আশীর্বাদ
নেই পোকামাকড়ের শঙ্কা, লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ফলনের সম্ভাবনা
- আপলোড সময় : ১১-০৯-২০২৫ ১১:৪২:২৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১২-০৯-২০২৫ ১২:০৭:৩০ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ