
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নতুনপাড়ায় মাদকাসক্ত যুবকের ছুরিকাঘাতে মো. আল-মুবিন (৫৫) নামের এক প্রতিবেশী খুন হয়েছেন - এটা শুধু একটি অপরাধের খবর নয়, বরং আমাদের সমাজের মূল্যবোধের চূড়ান্ত অবক্ষয়ের প্রতিচ্ছবি।
আল-মুবিন একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি হৃদয় বণিককে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মাতলামি করতে দেখে বাধা দেন, যা ছিলো ন্যায্য, দায়িত্বশীল এবং সামাজিকভাবে প্রশংসনীয়। অথচ তার এই প্রতিবাদই তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। এই হত্যাকা- প্রমাণ করে, আজ প্রতিবাদ করা মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়ে গেছে - কারণ সমাজের একাংশ হয়ে উঠেছে সহিংস, বেপরোয়া এবং আইন-শৃঙ্খলা বর্জিত।
ঘাতক হৃদয় বণিকের বিরুদ্ধে আগেই স্থানীয়দের অসন্তোষ ছিল- প্রতিদিনের মাদকসেবন, গালিগালাজ, নির্মাণাধীন ভবনে আসর বসানো, সবই জানতো এলাকাবাসী। তবু কেন তার বিরুদ্ধে আগে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি? প্রশাসন এবং সমাজ উভয়ের দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
এই ঘটনা কয়েকটি প্রশ্ন সামনে আনে: ১. মাদকাসক্ত এক ব্যক্তি দিনের পর দিন কিভাবে এলাকায় এমন নির্লজ্জ আচরণ করতে পারে? ২. পরিবার, সমাজ এবং প্রশাসন - তিনটি স্তরের প্রতিরোধ কোথায় ছিল? ৩. একজন প্রতিবাদী নাগরিককে রক্ষা করতে না পারলে কীভাবে আমরা সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো?
পুলিশের তাৎক্ষণিক অভিযানে ঘাতককে আটকের ঘটনা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে এই মামলায় দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে মাদকবিরোধী অভিযানকে শুধু কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবেও কার্যকর করতে হবে। পাশাপাশি সমাজে যে রকম সহিংসতার বীজ বপন হচ্ছে - তা প্রতিরোধে স্থানীয় পর্যায়ে নাগরিক সচেতনতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মূল্যবোধভিত্তিক শিক্ষা এবং পারিবারিক বন্ধন জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।