
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মধ্যনগর, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ সদর এবং ছাতক উপজেলার সীমান্ত পয়েন্টগুলো দিয়ে ভারত থেকে গরু-মহিষসহ নানা অবৈধ পণ্য প্রবেশ করছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ থেকেও ভারতে পাচার হচ্ছে মাছ, শুঁটকি, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ও রপ্তানিযোগ্য পণ্য। সীমান্তবাসীদের বক্তব্য, এই অবৈধ কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে চলে আসলেও কার্যকর ব্যবস্থা অনুপস্থিত।
সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবি’র তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ মাসে ৪৬৫টি গরু আটক করা হয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই পরিমাণের বহু গুণ বেশি গরু সীমান্ত পেরিয়ে আসে এবং স্থানীয় হাটের অসাধু ইজারাদারদের সহায়তায় ‘হাসিল’ দিয়ে বৈধতা লাভ করে। ফলে একদিকে দেশীয় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।
এ চোরাচালান শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়েরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সীমান্তের যুবসমাজ এক শ্রেণির চোরাকারবারির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছে। অপরাধমূলক কর্মকা-ে সম্পৃক্ততা বাড়ছে। অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো প্রতিরোধ দেখা যাচ্ছে না। সীমান্তের নিরাপত্তা বাহিনী বিজিবি অভিযানের কথা বললেও, স্থানীয়দের অভিযোগ- এই নজরদারি যথেষ্ট নয়।
প্রশ্ন জাগে, কোথায় ব্যর্থতা? বিজিবি, পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসন - তিনটি স্তর থাকা সত্ত্বেও কীভাবে রাতের অন্ধকারে গরু ও পণ্য সীমান্ত পাড়ি দেয়? হাট ইজারাদারদের স্বেচ্ছাচারিতা বা দুর্নীতি কিভাবে চলে?
আমরা মনে করি, চোরাচালান বন্ধে কেবল অভিযান নয়, প্রয়োজন সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত কৌশল, হাট ব্যবস্থায় জবাবদিহিতা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে তথ্যভিত্তিক নজরদারি। পাশাপাশি, চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত চিহ্নিত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।
এ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, রাজস্ব আদায়, স্থানীয় অর্থনীতি এবং যুব সমাজের ভবিষ্যৎ রক্ষায় চোরাচালান প্রতিরোধ কোনো বিকল্প নয়। সরকারকে এই বিষয়ে দৃঢ়, টেকসই ও শূন্য-সহিষ্ণু নীতি গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো ধীরে ধীরে অপরাধপ্রবণ অঞ্চলে পরিণত হবে - যার খেসারত দিতে হবে পুরো জাতিকে।