শাল্লার পিআইও কি নতুন কৌশলে পুরনো দুর্নীতি ঢাকতে চাইছেন?

আপলোড সময় : ১৩-০৬-২০২৫ ১১:২৩:২০ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৩-০৬-২০২৫ ১১:২৩:২০ অপরাহ্ন
জনসেবার আসনে থেকে যারা দুর্নীতির আশ্রয় নেন, তারা শুধু আইনভঙ্গকারী নন - তারা জনগণের আস্থার প্রতারকও। শাল্লা উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নুরুন নবী সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকান্ড সে কথাই আবারও প্রমাণ করল। গত মে মাসে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে তার অনুপস্থিতি এবং পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অসৌজন্যমূলক আচরণ, কোনোভাবেই দায়িত্বশীল কর্মকর্তার আচরণ হতে পারে না। এই ঘটনায় যখন তার বিরুদ্ধে বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়, তখনই পরিষ্কার হয়ে যায় - এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ কেবল গুজব নয়, বরং বাস্তব ও উদ্বেগজনক। এরপর যা ঘটেছে, তা আরও গভীর উদ্বেগের কারণ। পবিত্র ঈদুল আজহা’র প্রাক্কালে সাংবাদিকদের ‘উপহারের খামে’ নগদ টাকা বিতরণের মাধ্যমে তিনি যেন এক অদৃশ্য বাকশক্তির নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইলেন। তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে ঘুষের হাত বাড়িয়ে যেন বললেন- “আমার বিরুদ্ধে কিছু লিখবেন না!” কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, কিছু সাংবাদিক সেই টাকা গ্রহণ করেছেন, আবার অনেকে প্রতিবাদ করেছেন, যা এই পেশার জন্য আশার সঞ্চার করে। প্রশ্ন হচ্ছে- একজন সরকারি কর্মকর্তা কীভাবে সরকারি কার্যালয় থেকে সাংবাদিকদের খামভর্তি টাকা বিতরণ করতে পারেন? এই টাকা কোথা থেকে এলো? এটি কি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কোন বরাদ্দ থেকে এসেছে? নাকি দীর্ঘদিনের দুর্নীতির সঞ্চয়? এই ধরনের কৌশলী ‘সাংবাদিক কেনা’র প্রচেষ্টা শুধু সাংবাদিকতার স্বাধীনতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং পুরো প্রশাসনিক কাঠামোর স্বচ্ছতার ওপর আঘাত হানে। যদি সত্যিই কোন সাংবাদিক এই টাকা গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে তারা সেই মহান পেশার নৈতিক জায়গা থেকে সরে এসেছেন, যেখানে জনগণের স্বার্থই শ্রেষ্ঠ। সাংবাদিকতা মানে শুধু সংবাদ লেখা নয়, এটি দায়িত্ব, এটি নৈতিকতা, এটি নিরপেক্ষতার অনুশীলন। পিআইও নুরুন নবী সরকারের এহেন অপকর্মের পেছনে যদি কোনো রাজনৈতিক ছত্রছায়া বা প্রভাব কাজ করে থাকে, তবে সেটিও তদন্তের আওতায় আসা উচিত। এ ধরনের কর্মকর্তার উপস্থিতি শুধু শাল্লা নয়, দেশের যেকোনো জায়গার জন্যই হুমকিস্বরূপ। আমরা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি- বিষয়টিকে শুধু ‘খোঁজ নেব’ বলার মাধ্যমে এড়িয়ে যাওয়া চলবে না। তদন্ত করতে হবে স্বচ্ছভাবে, প্রকাশ করতে হবে রিপোর্ট, এবং দোষী প্রমাণিত হলে প্রশাসনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ দেশের জনগণ রাষ্ট্রকে যে কর দেয়, তা দিয়ে পিআইওরা সুবিধাভোগ করার জন্য নয়, সেবা দেওয়ার জন্য। সেবার জায়গা থেকে কেউ সরে গিয়ে যদি স্বার্থরক্ষার জন্য ঘুষের খাম নিয়ে আসেন, তবে তা ‘ঈদের উপহার’ নয় - সেটি একটি প্রতারণার চিঠি, একটি আত্মপক্ষ রক্ষার দুর্নীতিমূলক প্রচেষ্টা। আমরা চাই, শাল্লার এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক তদন্ত ও বিচার হোক। যেন ভবিষ্যতে আর কোনো ঘুষ, আর কোনো সাংবাদিক কিনে নেওয়ার চেষ্টা না হয়।

সম্পাদকীয় :

  • সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো. জিয়াউল হক
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : বিজন সেন রায়
  • বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মোক্তারপাড়া রোড, সুনামগঞ্জ-৩০০০।

অফিস :

  • ই-মেইল : [email protected]
  • ওয়েবসাইট : www.sunamkantha.com