
দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি ::
দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নে কাজ না করেই তিনটি সরকারি প্রকল্পের প্রায় ছয় লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে লক্ষীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এই বিষয়ে লক্ষীপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মো. আমিন মিয়া সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরূপ রতন সিংহ বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কাবিখা, কাবিটা ও টিআর কর্মসূচির আওতায় তিনটি প্রকল্পে বরাদ্দ পাওয়া হলেও বাস্তবে কোনো কাজ না করেই কাগজে-কলমে তা স¤পন্ন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
জানা গেছে, নোয়াগাঁও গ্রামের মেইন রোড থেকে ছিদ্দিক আলীর বাড়ি এবং সুরাবের বাড়ি থেকে আলী আশরাফের বাড়ি পর্যন্ত রান্তা পুনঃনির্মাণে ৮ মেট্রিক টন গম (প্রায় ২ লাখ টাকার সমমূল্য) বরাদ্দ হয়। বাস্তবে কোনো কাজ না করেই তা স¤পন্ন দেখানো হয়েছে। একই ভাবে তিলোরাকান্দি গ্রামের মোহাম্মদ আলীর পুকুরপাড় থেকে মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা উন্নয়নে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ হলেও পুরনো অবস্থায় রয়েছে পুরো সড়ক। একই গ্রামের ডাক্তার এনামুল হকের বাড়ি থেকে কৃষ্ণতলা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও স্থানীয়দের দাবি মাত্র ৫০ হাজার টাকার কাজ হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগে যেরকম ছিল, এখনও সেরকমই রয়েছে। কোনো কাজ হয়নি।
নোয়াগাঁও গ্রামের নুর আলম বলেন, “চেয়ারম্যান আশ্বাস দিয়ে কোনো কাজ করেন না। এবার তো কাজ না করেই টাকা তুলে নিয়েছেন।”
আরেক বাসিন্দা মোঃ মমিন মিয়া বলেন, “এই রাস্তায় আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যায়। বর্ষায় পানি উঠে চলাচল অসম্ভব হয়। বহুবার অনুরোধ করেছি, এমনকি দাওয়াতেও ডেকেছি, তবুও কাজ হয়নি। এখন শুনি টাকাই তুলে নিয়েছে!”
আব্দুল খালিক নামে আরেকজন বলেন, “আমরা এমনিতেই অবহেলিত। তার ওপর যে কাজ হওয়ার কথা, সেটাও না করে টাকা আত্মসাৎ হলে আমাদের অবস্থা কী হবে?”
স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ সাধারণ মানুষের প্রাপ্য অর্থ আত্মসাৎ করার সাহস না পায়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লক্ষীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আমি এসব প্রকল্পের কোনোটিরই সভাপতি না। অথচ আমাকে জড়িয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইউএনও অফিসে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। যারা প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা কাজ করেই টাকা উত্তোলন করেছেন। এসব কাজের মনিটরিং করেছে জেলা ও উপজেলা মনিটরিং কমিটি। মনিটরিং ছাড়া তো টাকা উত্তোলন করা যায় না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরূপ রতন সিংহ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।