
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ৩৩০ দিনে দেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর ঘটেছে আড়াই হাজারেরও বেশি সহিংসতার ঘটনা। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই সময়ে সংঘটিত ২ হাজার ৪৪২টি সহিংসতার প্রতিটি ঘটনাই আমাদের জাতীয় জীবনে প্রশ্ন তোলে- আমরা কি আদৌ একটি বৈষম্যহীন, মানবিক রাষ্ট্রের পথে এগোচ্ছি?
এই সহিংসতা নিছক সংখ্যার খেলা নয় - এগুলোর পেছনে আছে অসংখ্য মানুষ, পরিবার, সামাজিক নিরাপত্তা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, আর নাগরিক অধিকারের চরম লঙ্ঘনের করুণ ইতিহাস। হত্যা, ধর্ষণ, উপাসনালয়ে ভাঙচুর, জোরপূর্বক দখল, নিপীড়ন কিংবা অবমাননার ঘটনায় প্রতিনিয়ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীগুলোর জীবন বিপন্ন হচ্ছে, অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থেকে যাচ্ছে বিচারহীনতা।
ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ যেভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা একেবারে অবান্তর নয়। এই পরিস্থিতিতে নিপীড়নের ঘটনাগুলোকে রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে উপেক্ষা করা কিংবা প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করা ভয়াবহ বার্তা দেয়- যেখানে দায়মুক্তি একটি নতুন সামাজিক স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়।
একটি গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী রাষ্ট্রে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা শুধু সংবিধানগত অঙ্গীকার নয়, এটি মানবিক দায়িত্ব। রাষ্ট্রযন্ত্র যদি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়, তবে তা কেবল জাতিগত সম্পর্কেই ফাটল ধরায় না, সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রের নৈতিক ভিত্তিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।
আমরা মনে করি, এই সহিংসতা বন্ধে রাষ্ট্রকে এখনই কার্যকর, কঠোর ও নিরপেক্ষ পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিটি ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং মানসিক সহায়তার ব্যবস্থা নিতে হবে। সেইসাথে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চর্চা শুরু হোক পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমে - এই সমাজ যদি সত্যিকার অর্থে সাম্যের সমাজ হতে চায়।
আজ যখন বিশ্বজুড়ে সহনশীলতা, বহুত্ববাদ ও মানবিকতার জয়গান চলছে, তখন আমাদের দেশে বারবার সংখ্যালঘুদের রক্ত ঝরার খবর শুধু আমাদের ব্যর্থতা নয়, আমাদের বিবেকেরও অপমান। আমরা- সাম্প্রদায়িকতা নয়, সম্প্রীতির বাংলাদেশ চাই।