
আশিস রহমান ::
দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বড়কাটা গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে একটি সেতুর অভাবে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গ্রামের একমাত্র সংযোগ পথে নেই কোনো পাকা সেতু। বাধ্য হয়ে বাঁশের তৈরি একটি অস্থায়ী সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন হাজারো মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় ৩ হাজার মানুষের বাস এই বড়কাটা গ্রামে। রয়েছে দুটি মসজিদ ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শুধু বড়কাটা নয়, পার্শ্ববর্তী বৈঠাখাই, এরুয়াখাই, তিলুরাকান্দি ও চকবাজার গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ এই বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে হাট-বাজার, স্কুল, চিকিৎসা ও অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াত করে থাকেন। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বাঁশের সাঁকোটি আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। অতিরিক্ত ¯্রােত ও পানির উচ্চতায় সাঁকো হেলে পড়ে। এমনকি প্রায় সময় সাঁকোর কাঠামোও ভেঙে যায়। ফলে শিক্ষার্থী, রোগী, শিশু ও বৃদ্ধদের চলাচলে চরম বিপদ তৈরি হয়।
বড়কাটা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হেকিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এতো বছর ধরে এখানে একটা পাকা সেতুর দাবি করে আসছি, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রতিবার নির্বাচনের আগে আশ্বাস পাই, পরে আর কেউ ফিরেও তাকায় না।”
একই গ্রামের স্কুলছাত্রী রিমা আক্তার জানায়, “সাঁকোটা খুব সরু। ভারসাম্য হারালেই পানিতে পড়ে যেতে হয়। বৃষ্টির সময় সাঁকো ভিজে পিচ্ছিল হয়ে পড়ে, তখন স্কুলে যাওয়া আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।”
বড়কাটা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সভাপতি সৈয়দ আহমেদ বলেন, “এই অঞ্চলের জন্য এটি একটি চরম অবিচার। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন বাঁশের সাঁকো পার হচ্ছে সবাই। আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি, মানববন্ধন করেছি। কিন্তু দেখার কেউ নেই।”
বৈঠাখাই বাজারের ফার্মেসি ব্যবসায়ী জামির হোসেন বলেন, “রোগী নিয়ে সাঁকো পার হতে গেলে খুব বিপদ হয়। বয়স্ক লোকজন আর স্ট্রেচার নিয়ে আসা-যাওয়া প্রায় অসম্ভব। এখানে একটা সেতু না থাকায় আমাদের ব্যবসা, চিকিৎসা, সব কিছুতেই সমস্যা হচ্ছে।”
বড়কাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস শহীদ বলেন, “সেতু না থাকায় অনেক ছাত্র-ছাত্রী বর্ষার মৌসুমে স্কুলে আসতে পারে না। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বড় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ হলেও বড়কাটা ও আশপাশের গ্রামের সেতু সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। বার বার আশ্বাস দিয়েও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম বলেন, এখানে একটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আমি আশাবাদী খুব শিঘ্রই এটি বাস্ততবায়ন হবে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরূপ রতন সিংহ জানান, এবিষয়ে আমার জানা নেই। আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখব এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে এবিষয়ে আলাপ করব।