
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর - প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি, যেখানে নীল আকাশ আর জলরাশি মিলেমিশে তৈরি করেছে এক অদ্বিতীয় পরিবেশ। এই হাওর শুধুমাত্র প্রকৃতি প্রেমীদের নয়, বরং দেশের পর্যটন শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনাময় কেন্দ্র। সেই সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করেই গত শুক্রবার টাঙ্গুয়ার হাওরে উদ্বোধন করা হলো ভাসমান বাজার - যা নিঃসন্দেহে পর্যটন ও স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে এই প্রতীকী বাজার চালু করা হয়। নান্দনিক এই উদ্যোগে হাওরপাড়ের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের হাতে তৈরি নকশী কাঁথা, দেশীয় পিঠা, স্থানীয় ফলমূল ও অন্যান্য হস্তশিল্পের পসরা সাজানো হয় ছোট ছোট নৌকায়। ভাসমান অবস্থায় বাজার পরিচালনার এই অনন্য আয়োজন যেমন পর্যটকদের আকর্ষণ করবে, তেমনি হাওরের প্রান্তিক মানুষের জীবিকায় নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।
আমরা মনে করি, এই বাজার শুধু একটি অর্থনৈতিক কার্যক্রম নয় - এটি হাওরাঞ্চলের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সৃজনশীলতাকে পর্যটকদের সামনে তুলে ধরার একটি প্ল্যাটফর্ম। হাউজবোট মালিক ও পর্যটকদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে যে, সময়োপযোগী এই উদ্যোগ স্থানীয় জনগণের জীবনে সরাসরি সুফল বয়ে আনতে পারে। তবে, এই উদ্যোগকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন স্থায়ী পরিকল্পনা, নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক সহায়তা। ভাসমান বাজার যেন কেবল উৎসবমুখর উদ্বোধনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে - তা নিশ্চিত করতে হবে। নিয়মিত বাজার পরিচালনা, নিরাপত্তা, আবর্জনা ব্যবস্থাপনা, পর্যটক সেবা ইত্যাদিতে প্রশাসনের নজরদারি থাকতে হবে। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ ও ক্ষুদ্র ঋণের সুযোগও সৃষ্টি করা যেতে পারে। আমরা আশা করি, এই উদ্যোগ অন্যান্য হাওরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথ সুগম করবে।