
পঞ্চম শ্রেণির সরকারি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন ও সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত না করায় দেশজুড়ে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। এরই প্রতিবাদে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ঐক্য পরিষদ (বিকপ) সুনামগঞ্জ জেলা শাখার মানববন্ধন সেই অসন্তোষের বাস্তব প্রতিফলন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১৭ জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দের পরিপত্র অনুযায়ী, শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ রেখে একটি বিশাল অংশের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার হরণ করা হয়েছে। অথচ ২০০৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষার্থীরা এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এসেছে এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বৃত্তি লাভ করেছে। তাহলে হঠাৎ করে এই বর্জনের সিদ্ধান্ত কেন?
একটি রাষ্ট্রের শিক্ষানীতি হতে হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সঙ্গত এবং বৈষম্যহীন। কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রেরই ভবিষ্যৎ নাগরিক, তারা কোনো ভিন্ন জাতি বা শ্রেণির প্রতিনিধি নয়। সরকারি-বেসরকারি সব শিশু সমানভাবে রাষ্ট্রের সম্পদ। অথচ এই সিদ্ধান্ত তাদের সঙ্গে এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য এবং মানসিক নিপীড়ন।
বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনগুলো দেশের প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। অনেক সময় সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার ঘাটতি পূরণ করছে এ প্রতিষ্ঠানগুলো। সেখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষার সুযোগ না দেওয়া তাদের মেধা যাচাইয়ের পথ রুদ্ধ করা, যা কোনোভাবেই শিক্ষার সার্বজনীনতা ও ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
সরকার যদি শিক্ষায় সমতা ও অন্তর্ভুক্তির কথা বলে, তাহলে কেন এই অনিয়মিত, অসম ও বিভাজনমূলক সিদ্ধান্ত? কেন রাষ্ট্রীয় সুবিধা থেকে একটি বৃহৎ শিক্ষার্থী শ্রেণিকে বঞ্চিত করা হবে?
আমরা মনে করি, বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে অবিলম্বে সংশোধিত পরিপত্র জারি করা উচিত, যাতে কিন্ডারগার্টেন ও সমমানের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। শিক্ষার সুযোগ সবার জন্য সমান নিশ্চিত করাই একটি কল্যাণরাষ্ট্রের দায়িত্ব।
এই বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত বাতিল না হলে আগামী প্রজন্মের মধ্যে একটি ক্ষোভ, বঞ্চনার মনোভাব গড়ে উঠবে, যা ভবিষ্যতে সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। সরকারকে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সকল শিশু শিক্ষার্থীর জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।