
২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশজুড়ে যখন প্রশাসনিক শূন্যতা, সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল সুনামগঞ্জ। ৫ আগস্ট পরবর্তী টানা তিনদিন সরকারবিহীন পরিস্থিতিতেও এখানে বড় কোনো সহিংসতা, লুটপাট বা সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেনি, যা শুধু সুনামগঞ্জের জন্য নয়, গোটা বাংলাদেশের জন্যই এক অনন্য উদাহরণ।
এ সময় সুনামগঞ্জের রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষ দলমত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একযোগে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করেছেন। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান - সবার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পাহারা দিয়েছেন ভিন্ন মতাদর্শের নেতাকর্মীরাও। বিরোধী দল ও সুধীজন বুক চিতিয়ে রক্ষা করেছেন সাধারণ মানুষের জানমাল। ফলে অরাজকতার ভয়াবহ ঢেউ এখানে আঘাত হানতে পারেনি।
এই ঐতিহ্য সুনামগঞ্জের নতুন নয়। ব্রিটিশ আমলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ষাটের দশকে সিলেটি-আবাদি দ্বন্দ্ব, কিংবা বাবরী মসজিদ দাঙ্গার সময়ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে সম্প্রীতির ইতিহাস রক্ষা করেছেন। ২০২৪ সালের ঘটনাও সেই গৌরবময় ধারাবাহিকতারই আরেক উজ্জ্বল অধ্যায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পেরিয়ে আজও সুনামগঞ্জে বড় কোনো সাম্প্রদায়িক বা রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটেনি। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে এসেছে - যা প্রমাণ করে, সংকটে ঐক্যবদ্ধ সুনামগঞ্জবাসীই শান্তির সর্বশ্রেষ্ঠ রক্ষক।
আমরা মনে করি, সুনামগঞ্জের এই অভিজ্ঞতা সারাদেশের জন্য শিক্ষা হতে পারে। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও মানবিক দায়িত্ব, সামাজিক সম্প্রীতি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধই পারে একটি সমাজকে অরাজকতা থেকে রক্ষা করতে। তাই, সুনামগঞ্জের এই অমূল্য ঐতিহ্যকে শুধু ধরে রাখাই নয়, তা সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া সময়ের দাবি। শান্তি ও সম্প্রীতির এই মডেল আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকুক - যাতে যে কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক সংকটে আমরা বিভক্ত না হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে পারি।