
গাজীপুরে প্রকাশ্যে কুপিয়ে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে হত্যার ঘটনা কেবল একটি ব্যক্তিগত হত্যাকা- নয় - এটি আমাদের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার এবং আইনের শাসনের ওপর সরাসরি আঘাত। দিবালোকে একজন সাংবাদিককে এভাবে হত্যা করা প্রমাণ করে, দেশে অপরাধীরা কতটা
বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এবং আমাদের বিচারব্যবস্থার প্রতি তাদের ভয় কতটা কমে গেছে।
সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। তাদের কাজ হচ্ছে সত্য উদঘাটন করা, জনস্বার্থের বিষয়গুলো সমাজ ও রাষ্ট্রের সামনে তুলে ধরা। কিন্তু যখন সত্য প্রকাশের দায়ে একজন সংবাদকর্মীর জীবন কেড়ে নেওয়া হয়, তখন তা গোটা জাতির নৈতিক বোধকে চ্যালেঞ্জ জানায়। সাংবাদিক তুহিনের হত্যাকা- সেই চ্যালেঞ্জেরই নির্মম
উদাহরণ।
এই হত্যার পর সুনামগঞ্জে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা যথার্থই বলেছেন- এটি কেবল একজন সাংবাদিকের মৃত্যু নয়, বরং স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের ওপর এক চরম হুমকি। অপরাধীরা যদি প্রকাশ্যে এভাবে সাংবাদিক হত্যা করে পার পেয়ে যায়, তবে যে ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হবে, তা কেবল সাংবাদিকদের নয়, সাধারণ মানুষেরও কণ্ঠ রুদ্ধ করবে।
আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই- এই হত্যাকা-ের দ্রুত ও স্বচ্ছ বিচার নিশ্চিত করতে হবে। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন নৃশংসতা করার সাহস না পায়। শুধু শাস্তিই নয়, নিহত সাংবাদিকের পরিবারকে পর্যাপ্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে রাষ্ট্র ও সমাজকে।
এছাড়া, সাংবাদিকদের জন্য একটি কার্যকর নিরাপত্তা নীতি প্রণয়ন করা এখন সময়ের দাবি। বারবার সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মামলা, হত্যার ঘটনা প্রমাণ
করছে- তাদের সুরক্ষার জন্য বিদ্যমান আইন ও কাঠামো পর্যাপ্ত নয়। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মানে গণতন্ত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
তুহিন হত্যার নিন্দা জানানো যথেষ্ট নয়, এর বিচার নিশ্চিত করাই হবে প্রকৃত প্রতিবাদ। রাষ্ট্রকে এই বার্তাটি স্পষ্টভাবে দিতে হবে, সত্যকে রক্তে ডুবিয়ে রাখা যাবে না, এবং যারা চেষ্টা করবে, তারা আইন ও ন্যায়ের কাছে কঠোর জবাবদিহির মুখোমুখি হবে। এ হত্যাকা-ের বিচারের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে প্রমাণ করতে হবে-গণতন্ত্র, সত্য ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নে কোনো আপস নেই।