
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবসে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার বক্তব্য আমাদের বাস্তবতার সঙ্গে গভীরভাবে মিলে যায়। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, প্রযুক্তিনির্ভর যুগে দক্ষতা ও প্রযুক্তির সমন্বয় না ঘটালে শ্রমবাজারে আমাদের মূল্যায়ন কমে যাবে। এই সতর্কবার্তাটি শুধু সুনামগঞ্জের জন্য নয়, বরং সমগ্র দেশের জন্য প্রযোজ্য। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশই যুবক - এই বিশাল কর্মক্ষম জনশক্তিই আমাদের প্রধান স¤পদ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেখা যায়, অনেক যুবক এখনো প্রথাগত শিক্ষায় সীমাবদ্ধ, বাজারের চাহিদা অনুযায়ী প্রযুক্তিগত দক্ষতায় পিছিয়ে। ফলশ্রুতিতে তারা বেকারত্বের বোঝা বইছে, অথচ বৈশ্বিক শ্রমবাজারে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। বর্তমান সরকারের নানামুখী উদ্যোগ- যেমন ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, মোবাইল মেরামত, ক¤িপউটার শিক্ষা ও বিভিন্ন উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচি যুব সমাজের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। কিন্তু শুধু প্রশিক্ষণ দিলেই হবে না; প্রশিক্ষণ-পরবর্তী সময়ের জন্য উদ্যোক্তা সহায়তা, সহজ ঋণপ্রাপ্তি, বিপণন সুবিধা ও আন্তর্জাতিক বাজারে সংযোগ তৈরির পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তি শুধু কর্মসংস্থানের সুযোগ নয়, বরং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার হাতিয়ার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ই-কমার্স, ডিজিটাল মার্কেটিং, সাইবার নিরাপত্তা, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট - এসব খাতেই আগামী দিনের চাকরি ও আয়ের বড় অংশ তৈরি হবে। এখন থেকেই আমাদের যুবসমাজকে এসব খাতে দক্ষ করে তুলতে না পারলে, আমরা সুযোগ হারাব। যুব সমাজকে আত্মনির্ভরশীল করা মানে শুধু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নয়; এটি সামাজিক স্থিতিশীলতা, দারিদ্র্য বিমোচন এবং জাতীয় উন্নয়নের মূলভিত্তি গড়ে তোলা। তাই পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকার ও বেসরকারি খাত সবাইকে মিলিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। যুবকরা যদি প্রযুক্তি ও দক্ষতার সমন্বয়ে এগিয়ে যায়, তবে তারা শুধু নিজেদের ভবিষ্যৎ বদলাবে না, বরং বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও বিশ্ব মানচিত্রে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। সময় এসেছে কথা নয়, কাজে নামার। এখনই উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে প্রতিটি যুবক হয় প্রযুক্তিনির্ভর, আত্মনির্ভরশীল এবং বিশ্ব প্রতিযোগিতায় সক্ষম।