
হাওর অঞ্চল বাংলাদেশের এক অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ। জলজ জীববৈচিত্র্য, মাছের প্রজননক্ষেত্র ও প্রাণিসম্পদের জন্য এই অঞ্চলই অন্যতম আশ্রয়স্থল। অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির নামে দীর্ঘদিন ধরে বালাইনাশক ব্যবহারের যে অনিয়ন্ত্রিত প্রবণতা গড়ে উঠেছে, তা আজ হাওরের প্রাণ-প্রতিবেশকে চরম হুমকির মুখে ফেলেছে।
এ বিষয়ে জাতীয় কমিটির সাম্প্রতিক বৈঠকে বালাইনাশকের বহুমাত্রিক ক্ষতির যেসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তা গভীর উদ্বেগজনক। গবেষণায় প্রমাণিত হচ্ছে, পানি ও বাতাসের মাধ্যমে এই রাসায়নিক পদার্থ হাওরের নদী, খাল ও পুকুরে প্রবেশ করে মাছ মেরে ফেলছে, তাদের প্রজননের
ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে এবং খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে দিচ্ছে। মাছ, দুধ, ডিম ও মাংসে এসব রাসায়নিকের অবশিষ্টাংশ শনাক্ত হওয়া শুধু পরিবেশের জন্যই নয়, মানবস্বাস্থ্যের জন্যও দীর্ঘমেয়াদি অশনিসংকেত।
এমন বাস্তবতায় হাওর অঞ্চলে বালাইনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রনে নীতিমালা প্রণয়ন ও এর বিকল্প হিসেবে টেকসই কৃষি পদ্ধতি প্রয়োগ এখন সময়ের দাবি। সাধারণ কৃষকদের অজ্ঞতা বা বিকল্প ব্যবস্থা না থাকার কারণেই তারা এখনও ক্ষতিকর রাসায়নিকের ওপর নির্ভরশীল। তাই প্রথমেই প্রয়োজন মাঠপর্যায়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ ও তদারকি আরো কঠোর করতে হবে।
আমরা মনে করি, হাওর বাঁচলেই বাঁচবে দেশের জলজ সম্পদ ও খাদ্যনিরাপত্তা। তাই বালাইনাশক নিয়ন্ত্রণ ও বিকল্প পরিবেশবান্ধব কৃষি পদ্ধতির দ্রুত বাস্তবায়নে সরকারকে কঠোর ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ নিতে হবে। বালাইনাশকের লাগাম টেনে ধরতে দ্রুত উদ্যোগ না নিলে আগামী প্রজন্মের জন্য হাওর কেবল একটি স্মৃতির নাম হয়ে যাবে।