মাদকাসক্ত তরুণ প্রজন্ম : বাংলাদেশের ভয়াবহ ঝুঁকি

আপলোড সময় : ০৫-০৯-২০২৫ ০৮:১১:৪২ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ০৫-০৯-২০২৫ ০৮:১১:৪২ পূর্বাহ্ন
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বড় সামাজিক সংকটগুলোর একটি হলো মাদক। মাদকাসক্তির শিকার হয়ে পড়ছে দেশের তরুণ প্রজন্ম। সরকারি সমীক্ষা বলছে, দেশে বর্তমানে প্রায় ৮৩ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত। এর মধ্যে সিংহভাগই পুরুষ হলেও নারী ও শিশু-কিশোরের সংখ্যাও ক্রমাগত বাড়ছে। একেকটি পরিবার, একেকজন তরুণ-তরুণীর স্বপ্ন ধ্বংস করছে এই মরণনেশা। সেই সাথে ধ্বংস করছে সমাজ ও রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ। মাদকাসক্তরা পড়াশোনা শেষ করতে পারছে না, পরিবারকে জিম্মি করছে, অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। হতাশা, রাগ ও আক্রোশে তারা হয়ে উঠছে সহিংস। কোনো কোনো সময় নিজের বাবা-মায়ের ওপর পর্যন্ত হাত তোলে। চিকিৎসকেরা বলছেন, মাদক মানুষের মস্তিষ্ককে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যে, সে ব্যক্তি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক বোধশক্তি হারিয়ে নিষ্ঠুর হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, মাদকবিষয়ক মামলার বাস্তবতা আরও শঙ্কাজনক। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, গত বছর মাদক মামলার অর্ধেকের বেশি আসামি খালাস পেয়েছে। তদন্তের দুর্বলতা, সাক্ষ্যদানের অনিয়ম এবং আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে বড় কারবারিরা থেকে যাচ্ছে অদৃশ্য। বরং ধরা পড়ছে ছোটখাটো ব্যবসায়ী ও মাদকাসক্তরা। এতে মূল সমস্যার সমাধান দূরে থাক, বরং মাদকের শেকড় আরও গভীরে প্রবিষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে একটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে অবস্থান করছে। গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল ও গোল্ডেন ক্রিসেন্টের মাদকচক্র বহু আগে থেকেই আমাদের দেশে প্রবেশের পথ খুঁজে নিয়েছে। মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা আসছে, আবার ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিল ও অন্যান্য মাদক ঢুকছে। ড্রাগ রিপোর্ট ২০২৪ অনুযায়ী, দেশের ১০৪টি সীমান্ত পয়েন্ট এখন মাদক প্রবেশের ঝুঁকিতে রয়েছে। এদিকে, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রেও অবস্থা হতাশাজনক। সরকারি পর্যায়ে মাত্র অল্পসংখ্যক শয্যার সুযোগ আছে। অথচ মাদকাসক্তদের কার্যকর চিকিৎসা ও সামাজিক পুনর্বাসন না হলে তারা সমাজের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। ইতিমধ্যে বেসরকারি কিছু উদ্যোগ থাকলেও সেগুলোর মান ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র ও সমাজকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারি ও প্রযুক্তিনির্ভর পদক্ষেপ জরুরি। দ্বিতীয়ত, মাদকবিরোধী আইনের প্রয়োগে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া যাবে না; বড় কারবারিদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। তৃতীয়ত, তরুণ প্রজন্মকে সচেতন করতে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। চতুর্থত, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোকে বিস্তৃত ও মানসম্মত করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের ঘোষণা কেবল কাগজে-কলমে থাকলে চলবে না। মাঠপর্যায়ে জিরো টলারেন্স নীতির বাস্তব প্রয়োগ জরুরি। কারণ, আজকের তরুণ প্রজন্মই আগামী দিনের বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে। সেই তরুণদের যদি মাদকের কাছে হারাতে হয়, তবে রাষ্ট্রের অর্জন ও ভবিষ্যৎ দুই-ই বিপন্ন হবে। এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে মাদকের ছোবল আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রকে এক অন্ধকারে ঠেলে দেবে। মাদকের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।

সম্পাদকীয় :

  • সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো. জিয়াউল হক
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : বিজন সেন রায়
  • বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মোক্তারপাড়া রোড, সুনামগঞ্জ-৩০০০।

অফিস :

  • ই-মেইল : [email protected]
  • ওয়েবসাইট : www.sunamkantha.com