
সড়ক দুর্ঘটনা আজ আর নতুন কোনো খবর নয়। প্রায় প্রতিদিনই সংবাদপত্রে এ সম্পর্কিত খবর প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস এলাকায় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দুই কর্মী - জহিরুল ইসলাম ও সবদর আলীর মৃত্যু কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়, বরং আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, সড়ক ব্যবস্থাপনার ভয়াবহ অব্যবস্থা ও চালকদের বেপরোয়া আচরণ কীভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রের অঙ্গনেও ছোবল বসাচ্ছে।
সহকর্মীদের মানববন্ধনে কান্না আর ক্ষোভের ভাষা ছিলো ¯পষ্ট- চালকের অবহেলায় দুইটি পরিবার আজ নিঃস্ব। এ মৃত্যু কেবল দুইজন ব্যক্তির নয়, এটি দুইটি পরিবারের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিয়েছে। সবদর আলীর মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান এখন অনিশ্চয়তায়, জহিরুল ইসলামের পরিবার একই অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন জাগে, আমাদের সড়কগুলোতে প্রতিদিন যে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, তাদের পরিবারের অনিশ্চয়তার দায় কে নেবে?
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণগুলো বছরের পর বছর ধরে একই রকম থেকে গেছে, চালকের বেপরোয়া গতি, লাইসেন্সহীন বা প্রশিক্ষণবিহীন চালক, যানবাহনের অযতœ, সড়কের অপরিকল্পিত নকশা ও কার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভাব।
এই নির্দিষ্ট দুর্ঘটনায়ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মোটরসাইকেল সড়কের বাঁ পাশে থাকলেও বিপরীত দিক থেকে আসা প্রাইভেট কারটি উল্টোদিক দিয়ে গিয়ে ধাক্কা দেয়। এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, এটি সুস্পষ্ট অবহেলা এবং হত্যার শামিল।
আমরা মনে করি, এ ঘটনায় দায়ী চালককে দ্রুত গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা উচিত। একইসঙ্গে নিহতদের পরিবারকে সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তবে কেবল এই ঘটনার বিচার করলেই দায়িত্ব শেষ হবে না। প্রয়োজন একটি দীর্ঘমেয়াদি, টেকসই সড়ক নিরাপত্তা কর্মপরিকল্পনা। যেখানে চালকদের প্রশিক্ষণ, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, যানবাহনের ফিটনেস যাচাই এবং কঠোর আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে।
এই দুর্ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিটি মৃত্যু একটি পরিবারকে শূন্য করে দেয়। সহকর্মীদের মানববন্ধনের ভাষায় “আমরা শুধু দুই সহকর্মীকে হারাইনি, আমরা আমাদের পরিবারের দুই সদস্যকে হারিয়েছি।” সমাজ ও রাষ্ট্র যদি এই শূন্যতার দায় নিতে ব্যর্থ হয়, তবে প্রতিটি নতুন মৃত্যু আমাদের ব্যর্থতারই প্রতিফলন।
এখনই সময়, দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেওয়ার। শুধু নীতিনির্ধারকদের নয়, সড়কে চলাচলকারী প্রত্যেক চালক ও নাগরিকেরও সচেতন হওয়া জরুরি। নিরাপদ সড়ক এখন আর কোনো দাবি নয়, এটি আমাদের বেঁচে থাকার অপরিহার্য শর্ত।