ব্যস্ততম সড়কে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ, বেড়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি

আতঙ্কের আরেক নাম ‘ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কার’

আপলোড সময় : ২৩-০৯-২০২৫ ০৮:০০:৫১ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ২৩-০৯-২০২৫ ০৮:০৪:০৪ পূর্বাহ্ন
তানভীর আহমেদ::
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ব্যস্ততম সড়কগুলোতে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এতে বেড়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। জানাগেছে, জাহিদ রেন্ট-এ কারসহ অন্তত ১০টি ব্যক্তি মালিকানাধীন কার দিয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের শহরের ব্যস্ততম সড়কে গাড়ি চালানো শিখানো হচ্ছে। যাদের অনেকেরই কোনো অনুমোদন নেই।
অভিযোগ উঠেছে, অনুমোদন না থাকলেও বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করেই চলছে এসব ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টা ১৪ মিনিটে পৌর শহরের কাজির পয়েন্ট থেকে বিহারী পয়েন্টের দিকে একটি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গাড়ি চলতে দেখা যায়। গাড়িতে লেখা ‘প্রশিক্ষণ কার’। গাড়িটিতে তিন জন ব্যক্তি ছিলেন। গাড়িটির সামনের আসনে বসে থাকা একজন ব্যক্তি আরেকজনকে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। তবে, গাড়িতে থাকা ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তারা একটি ভিজিটিং কার্ড দিয়ে প্রশিক্ষণ গাড়িটি জাহিদ রেন্ট-এ কারের বলে জানিয়েছেন। শহরের ব্যস্ততম সড়কে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে স্বীকার করে,
জাহিদ রেন্ট-এ কারের মো. জাহিদ আহমদ বলেন, ব্যস্ততম সড়কে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তবে, সেক্ষেত্রে আমরা শহরের স্কুল ছুটি হয় বা স্কুলে শিক্ষার্থীরা আসছে এই সময় অন্তত গাড়ি চালাই না। তিনি আরও বলেন, শুধু আমি নয়, শহরে অন্তত আরও ৮-১০ টা কার দিয়ে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আমরা ব্যস্ততম সড়ক ছাড়াও অন্যান্য সড়কে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।
শহরের সচেতন নাগরিকরা বলছেন, এভাবে ব্যস্ত সড়কে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেয়াটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। প্রশিক্ষণার্থীদের আকস্মিক ব্রেক কষা বা লেন পরিবর্তনের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া অনেকে কারের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। এসব কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। শহরের সৃজন বিদ্যাপীঠের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, সকাল-দুপুর-বিকাল ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কারগুলোর সংশ্লিষ্টরা শহরের ব্যস্ততম সড়কে তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। ওইসব কারগুলোর ফিটনেসও নেই। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটায়। আমি আমার বাচ্চাকে প্রতিদিন স্কুলে আনা-নেয়া করি। রাস্তায় এসব কারগুলো দেখলেই ভয় লাগে। বিশেষ করে গাড়ির স্টিয়ারিং যখন শিক্ষানবিশ চালকদের হাতে থাকে, তখন দুর্ঘটনার ভয় থাকে। কখন কোন দুর্ঘটনা ঘটায় - এই আতঙ্কে থাকি।
শহরের ষোলঘর এলাকার বাসিন্দা মতিন মিয়া বলেন, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট স্থান বা কম ব্যস্ত সড়ক ব্যবহার করা উচিত। উন্নত বিশ্বে প্রশিক্ষণার্থীদের প্রথমে নির্ধারিত প্রশিক্ষণ মাঠে অনুশীলন করানো হয়। পর্যাপ্ত দক্ষতা অর্জনের পরেই তাদের মূল সড়কে প্রশিক্ষণের অনুমতি দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণের জন্য বিকল্প ও নিরাপদ স্থান নির্বাচন করতে হবে, যাতে শহরের সড়কগুলো নিরাপদ থাকে।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সুনামগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক মো. আবু হানিফ বলেন, শহরের ব্যস্ততম সড়কে ড্রাইভিং শিখানো হচ্ছে এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। শিক্ষানবিশরা সড়কে ড্রাইভিং করার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে ব্যস্ততম সড়কে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ বন্ধ করতে হবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)সহ সংশ্লিষ্টরা এসব দেখেও না দেখার ভান করে। তাদের গাফিলতির কারণে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (প্রশাসন) মোহাম্মদ হানিফ মিয়া বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো প্রশিক্ষণার্থী ব্যস্ততম সড়কে প্রশিক্ষণ গাড়ি চালাতে পারবেন না। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। তিনি আরও বলেন, যে সড়কগুলোতে মানুষের চলাচল কম, সেখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

সম্পাদকীয় :

  • সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো. জিয়াউল হক
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : বিজন সেন রায়
  • বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মোক্তারপাড়া রোড, সুনামগঞ্জ-৩০০০।

অফিস :

  • ই-মেইল : [email protected]
  • ওয়েবসাইট : www.sunamkantha.com